বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উত্তর জনপদের মৎস্য ভাণ্ডারখ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে দেশি প্রজাতি মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে শুঁটকির ভরা মৌসুমেও শুঁটকি তৈরিতে দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা। এই পেশার সাথে জড়িতদের জীবন ও জীবিকায় পড়েছে বিরূপ প্রভাব। সবমিলিয়ে ভালো নেই আত্রাইয়ের শুঁটকিপল্লী।
অবৈধভাবে মৎস্য আহরণের ফলে ক্রমেই কমতে শুরু করেছে দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা। মৌসুমের শুরুতেই শুঁটকি তৈরির জন্য সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হলেও মাছের অভাবে সেগুলো এখন মাছ শূন্য ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অন্যান্যবারের মত এবারে এলাকায় তেমন বন্যা না হওয়ায় নদী ও খাল বিলের পানি কমে যাওয়ায় যে সময় দেশি মাছে বাজার সয়লাব থাকার কথা সে সময় দেখা মিলছে না দেশি মাছের। ফলে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।
আত্রাই উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৬০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে শুঁটকি তৈরি শুরু হয়, চলে পৌষ-মাঘ মাস পর্যন্ত। এসময়টা ব্যস্ত সময় পার করেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। শুঁটকি তৈরি ও বাজারজাত করে যে আয় হয় তা দিয়ে সারাবছর চলে যায় ব্যবসায়ীদের। আত্রাই আহসানগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন ভরতেঁতুলিয়া গ্রামটি মূলত শুঁটকির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এছাড়া আত্রাই আহসানগঞ্জ রেললাইনের দুইপাশে ও কেডিসি সংলগ্ন এলাকায় মাচাতে শুঁটকি মাছ শুকানো হতো। কিন্তু এ বছর মাছের অভাবে অনেক মাচা ফাঁকা পড়ে আছে।
সরেজমিনে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের উত্তরের জেলা সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর ও ঢাকায় সরবরাহ হয় নওগাঁর আত্রাইয়ের শুঁটকি। তবে প্রধান বাজার ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য। এই শুঁটকি প্রথমে সৈয়দপুর যায়। এরপর সেখান থেকে ট্রেনযোগে রপ্তানি করা হয় ভারতে। তবে গতবছর বন্যা না হওয়ায় এবং খাল-বিলের পানি শুকিয়ে আসায় দেশীয় মাছে উৎপাদন কমে গেছে। এতে শুঁটকি উৎপাদন নিয়ে হতাশায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় পুঁটি, টাকি ও খলিসা মাছ। এক মণ পুঁটি শুকিয়ে ১৫ কেজি, চার মণ টাকি থেকে এক মণ এবং তিন মণ খলিসা মাছ শুকিয়ে এক মণ শুঁটকি হয়। বর্তমানে শুঁটকি ছোট পুঁটি ১৫০ টাকা, বড় পুঁটি ৪০০ টাকা, টাকি ৪০০-৪৫০ টাকা এবং খলিসা ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এবারে বন্যা না হওয়ায় নদী ও খাল-বিল প্রায় পানি শূন্য হয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে দেশীয় প্রজাতি মাছের তীব্র সংকট। ফলে বাজারে মাছ কম কিন্তু মূল্য বেশি হওয়ায় শুঁটকি তৈরিতে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মনে নেই আনন্দ। তাদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা।
ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী মঞ্জুর মোল্লা, উসমান শেখ, আব্দুস ছাত্তার সরদার, মোজাহার মোল্লা, নাফিকুল সরদার বলেন, শুঁটকি ব্যবসার সাথে আমরা দীর্ঘদিন থেকে সম্পৃক্ত। শুঁটকি তৈরিতে অর্থ খরচের সাথে সাথে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় হয়। সর্বপোরি রোদ- বৃষ্টি ও মাছের দুর্গন্ধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে এ পেশা চালিয়ে আসছি। পুঁটি, খোলসানী, চাঁন্দা, রাইখর, সাটিসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছের শুঁটকি আমরা তৈরি করি। এর মধ্যে বিশেষ করে পুঁটি ও সাটি মাছের শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এবারে মাছ কম কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। অনেকে শুঁটতি তৈরির সাজসরঞ্জাম তৈরি করলেও মাছ অভাবে সেগুলো পড়ে রয়েছে। এবারে ব্যবসা মন্দা হওয়ায় সারা বছর পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা কিভাবে চলবো তা নিয়ে আমরা চরম উদ্বিগ্ন রয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, শুঁটকির সঙ্গে জড়িতদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শুঁটকি তৈরিতে গত বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ মৎস্য আহরণ ও মা মাছ শিকার থেকে জেলেদের বিরত থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।