বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোনো কাজের ওপর গুরুত্বারোপের একটি পদ্ধতি হলো, কাজটি করার জন্য উৎসাহ দেয়া। আরেকটি পদ্ধতি হলো, কাজটি না করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক ও ভীতি প্রদর্শন করা। কোনো কিছুর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এ দুই পদ্ধতির যে কোনো একটি অবলম্বন করা যায়। তবে তা পূর্ণতা পায় যখন উভয় পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। নামাযের ওপর গুরুত্বারোপের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে উভয় পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। নামায পড়ার জন্য তিনি উৎসাহিতও করেছেন এবং নামায না পড়ার পরিণতি সম্পর্কে সতর্কও করেছেন। গত দুই সংখ্যায় উৎসাহ দেয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আমরা ভীতি প্রদর্শনের কয়েকটি দিক সম্পর্কে আলোকপাত করব।
নিফাক ও কপটতা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কুরআনে মুনাফিকদের কপটতার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। এক স্থানে আল্লাহ তাআলা তাদের চরিত্রের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন : নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে, অথচ তিনিই তাদের ধোঁকায় ফেলেন। আর তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন অলসতার সাথে দাঁড়ায়। তারা মানুষকে দেখায় আর আল্লাহকে খুব সামান্যই স্মরণ করে। (সূরা নিসা : ১৪২)।
এখানে আল্লাহ মুনাফিকদের চারটি চরিত্র তুলে ধরেছেন : ক. তারা আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি করে। বলাবাহুল্য, আল্লাহকে ধোঁকা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি সর্বজ্ঞ। কিন্তু মুনাফিকরা কপটতা করে মনে করে তারা আল্লাহকে ধোঁকা দিয়ে ফেলছে; আল্লাহ তাদের কপটতা সম্পর্কে অবগত নন। খ. তারা অলসতার সাথে নামায পড়ে। নামাযকে বোঝা মনে করে। গ. তারা মানুষকে দেখানোর জন্য নামায পড়ে; আল্লাহর প্রতিদানের আশায় কিংবা তাঁর আযাবের ভয়ে নয়। ঘ. তারা নামাযে আল্লাহকে খুব সামান্যই স্মরণ করে। অথচ নামায হচ্ছে আগাগোড়া আল্লাহর যিকির ও স্মরণ। যিকিরপূর্ণ সেই ইবাদতেই তারা আল্লাহকে অল্প স্মরণ করে। এ থেকে আন্দাজ করা যায় তারা কত অলস ও উদাসীন!
আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন : তাদের দান কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা কেবল এটা যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে কুফরী করেছে এবং তারা নামাযে আসে (চরম) অলসতার সাথে এবং তারা ব্যয় করে (খুব) অনিচ্ছার সাথে। (সূরা তাওবা : ৫৪)। এ আয়াতে মুনাফিকদের নিফাকের তিনটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে : ক. তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে কুফরী করেছে। হ্যাঁ, মুনাফিকরা আসলে কাফের। তাদের মধ্যে আর অন্য কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে, অন্য কাফেররা অন্তরের মতো মুখেও ইসলামকে অস্বীকার করে আর তারা অন্তরে অবিশ্বাস করে মুখে বিশ্বাসের কথা বলে। খ. তারা চরম অলসতার সাথে নামাযে আসে। গ. তারা আল্লাহর পথে খুব অনিচ্ছায় অর্থ ব্যয় করে।
আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন : দুর্ভোগ সেই নামাযীদের, যারা তাদের নামায সম্পর্কে উদাসীন, যারা মানুষকে দেখায় এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিসও দেয় না। (সূরা মাঊন : ৪-৭)। এখানে আল্লাহ মুনাফিকদের দুর্ভোগের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন, যারা নামায সম্পর্কে উদাসীন। নামাযের প্রতি, নামাযের ওয়াক্তের প্রতি যাদের গুরুত্ব নেই। যারা ইচ্ছা করে বিনা ওজরে নামাযের সময় নষ্ট করে। আর যাই পড়ে কেবল মানুষের ভয়ে পড়ে। যেখানে মানুষের ভয় নেই সেখানে নামায ছেড়ে দেয়।
উপরিউক্ত আয়াতগুলোয় আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের কপটতাপূর্ণ নামাযের নিন্দা করে মুমিন বান্দাদের শিক্ষা দিচ্ছেন তারা যেন আগ্রহ, উদ্যম ও যত্নের সাথে নামায পড়ে এবং তাঁকে স্মরণ ও সন্তুষ্ট করার জন্য পড়ে। নামাযের ব্যাপারে অলসতা, উদাসীনতা ও লৌকিকতা না করে। নামাযের সঙ্গে এহেন আচরণের পরিণতি দুর্ভোগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।