Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট বৃহস্পতিবার

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বাজদারের পদত্যাগ : নতুন সিএম মিত্র দলের চৌধুরী পারভেজ এলাহী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দায়ের করা অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ প্রস্তাব পেশ করার পর জাতীয় পরিষদের বহুল প্রত্যাশিত অধিবেশন ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। গতকালের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বিরোধী দলের নেতা শাহবাজ শরীফ নিম্নকক্ষে প্রস্তাব পেশ করেন, যা সমর্থনে আইন প্রণেতাদের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করে। ১৫৫ জনেরও বেশি আইনপ্রণেতা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রস্তাব উত্থাপনের পক্ষে ছিলেন। গণনা শেষে ডেপুটি স্পিকার শাহবাজকে প্রস্তাব পেশের অনুমতি দেন।
পিএমএল-এন সভাপতি বলেন ‘এ রেজুলেশনের মাধ্যমে, ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তানের সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের ১ ধারার অধীনে, এ হাউস সিদ্ধান্ত নেয় যে, এটি প্রধানমন্ত্রী, জনাব ইমরান খান নিয়াজির ওপর কোনো আস্থা রাখে না এবং ফলস্বরূপ, তিনি ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করবেন’। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রস্তাব পেশ করার পর ৩১ মার্চ স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ সংসদের নিম্নকক্ষ অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল, কিন্তু একজন সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সংসদীয় ঐতিহ্য অনুসরণ করে শুধুমাত্র সূরা ফাতেহা পাঠ করা হয় এবং বক্তৃতা দেয়া হয়, যার পরে স্পিকার গতকাল পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন মুলতবি করেন। এদিন পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয় এবং পিটিআই সংসদ সদস্য খেয়াল জামানের জন্য দোয়া করা হয়।
ক্ষমতাসীন পিটিআই-এর শাহ মাহমুদ কুরেশি, শীরিন মাজারি, আসাদ উমর এবং আলি মুহাম্মদ খানের পাশাপাশি গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের ডক্টর ফাহমিদা মির্জা অধিবেশনে যোগদানকারীদের মধ্যে ছিলেন। বিরোধী দল থেকে জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ, পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং পিপিপি কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি উপস্থিত ছিলেন।
বিরোধী দল, যাদের ১৬২ সদস্য রয়েছে, গত ৪ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করে। ১৫২ জন বিরোধী সদস্যের উত্থাপিত এ প্রস্তাবে বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান হাউসের আস্থা হারিয়েছেন। ক্ষমতাসীন জোটের কাছে বর্তমানে জাতীয় পরিষদের ১৭৯ সদস্যের সমর্থন রয়েছে।
এদিকে বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা পাঞ্জাবের চিফ মিনিস্টার উসমান বাজদার প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার পদত্যাগ পেশ করার পরে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পিএমএল-কিউ নেতা চৌধুরী পারভেজ এলাহীকে পাঞ্জাবের চিফ মিনিস্টার পদের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে। টুইটারে এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক যোগাযোগ বিষয়ক সহযোগী শাহবাজ গিল এ ঘোষণা দিয়েছেন।
পরে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ফারুখ হাবিব নিশ্চিত করেন যে, বাজদার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন। হাবিব আরো বলেছেন যে, পিএমএল-কিউ যৌথ বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে পেশ করা অনাস্থা প্রস্তাবে সরকারকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরোধী দল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এ বড় ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এদিকে, পিএমএল-কিউ নেতা তারিক বশির চিমা জিও নিউজের সাথে কথা বলার সময় নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি ফেডারেল মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং অনাস্থা ভোটে বিরোধীদের সমর্থন করবেন।
তার পদত্যাগপত্রে চিমা বলেন যে, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থিতিশীলতা আনতে এবং সরকারি শাসন সংক্রান্ত গুরুতর সমস্যা সমাধানে সরকারের অক্ষমতার কারণে তিনি অবিলম্বে আমার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন’।
পরে সরকারের অন্যতম মিত্র বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) ঘোষণা করেছে যে, তারা ‘বিরোধীদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে’। বিএপির সংসদীয় নেতা নবাবজাদা মীর খালিদ খান মাগসি বিরোধী নেতা শাহবাজ শরীফ, মাওলানা ফজলুর রহমান এবং আসিফ আলী জারদারির পাশাপাশি এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
গিলের ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে, তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, পাঞ্জাব সরকারে একটি ‘বড় পরিবর্তন’ আসছে, ‘এটা স্পষ্ট যে [প্রাদেশিক] সরকারে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে’। গতকাল আরো আগে বিরোধীরা পাঞ্জাব বিধানসভায় বর্তমান পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বাজদারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে। চৌধুরী এআরওয়াই নিউজের সাথে এক অনানুষ্ঠানিক আলাপকালে এ মন্তব্য করেন।
‘কজন আইনপ্রণেতার আনুগত্য পরিবর্তন একটি রসিকতা’
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ইজাজুল আহসান গতকাল উচ্চাদালতের এক শুনানিকালে পর্যবেক্ষণে বলেছেন যে, ‘কয়েকজন আইনপ্রণেতার যে কোনো সময় সরকার পরিবর্তনের জন্য আনুগত্য পরিবর্তন করা একটি রসিকতা’।
তিনি দলত্যাগের কারণে সংসদ সদস্যদের অযোগ্যতা সম্পর্কিত প্রেসিডেন্টের রেফারেন্সের শুনানির সময় ৬৩-এ ধারার ব্যাখ্যা সম্পর্কে শীর্ষ আদালতে তার মতামত জানানা।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বন্দিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতি আহসান, বিচারপতি মাজহার আলম খান মিয়াঁখেল, বিচারপতি মুনিব আখতার এবং বিচারপতি জামাল খান মান্দোখাইলের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ এই আবেদনের শুনানি করছেন। রেফারেন্সটি গত ২১ মার্চ পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল (এজিপি) খালিদ জাভেদ খান জমা দেন।
গতকাল শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণে বলেন যে, একজন সদস্যকে পদত্যাগ করানো হলেও এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ব্যর্থ হলেও ক্ষমতাসীন দল ‘এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়’।
পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল (এজিপি) খালিদ জাভেদ খান জবাব দিয়েছেন যে, যদি এমন হয় তবে একটি পৃথক পদ্ধতি ছিল। বিচারপতি আখতার পর্যবেক্ষণে বলেছেন যে, আজীবন অযোগ্যতার সাথে সম্পর্কিত নিবন্ধটি প্রযোজ্য ছিল যখন একজন সদস্য তার মনোনয়নপত্রে তথ্য গোপন করেন, প্রশ্ন করেন যে, কীভাবে একজন আইনপ্রণেতা তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের প্রক্রিয়া শুরু না করে আজীবনের জন্য অযোগ্য হতে পারে।
শুনানির আগে এজিপি খান ২০১৮ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের উল্লেখ করেন যেখানে এসসি সব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সাথে একটি হলফনামা জমা দিতে বলেছিল।
সংবিধানের ৬৩-এ অনুচ্ছেদ অনুসারে একজন সংসদ সদস্যকে দলত্যাগের কারণে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে যদি তিনি ‘প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী; বা আস্থা ভোট বা অনাস্থা ভোট; বা অর্থ বিল বা সংবিধান (সংশোধন) বিলে নিজ সংসদীয় দলের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনি সংসদীয় দলের জারি করা নির্দেশের বিরুদ্ধে ভোট দেন বা সংসদে ভোটদান থেকে বিরত থাকেন’।
নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, দলীয় প্রধানকে লিখিতভাবে ঘোষণা করতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট এমএনএ দলত্যাগ করেছেন, তবে ঘোষণা দেওয়ার আগে পার্টি প্রধান ‘এ জাতীয় সদস্যকে কারণ দেখানোর সুযোগ দেবেন যে, কেন তার বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘোষণা দেওয়া হবে না’।
সদস্যকে কারণ ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেওয়ার পর দলীয় প্রধান ঘোষণাটি স্পিকারের কাছে প্রেরণ করবেন, যিনি এটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে প্রেরণ করবেন। এরপর ঘোষণাটি নিশ্চিত করার জন্য সিইসির কাছে ৩০ দিন সময় থাকবে। সিইসি নিশ্চিত করলে, সদস্য ‘হাউসের সদস্য হওয়া বন্ধ করে দেবেন এবং তার আসন শূন্য হয়ে যাবে’।
সরকার ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘চূর্ণ’ করতে ৬৩-এ ধারা ব্যবহার করবে। প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. বাবর আওয়ান বলেন যে, সংবিধানের ৬৩-এ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের ভোট পেয়ে এবং দলীয় নেতৃত্বের নামে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের ফ্লোর ক্রস করতে না দেওয়া। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা সংবিধান ও আইনের মাধ্যমে অনাস্থা প্রস্তাবকে চূর্ণ করব’। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন অনলাইন।



 

Show all comments
  • Sadequl Islam ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:২২ এএম says : 0
    খুবই দুঃখজনক, একটা দেশ আমেরিকার অনুগত না হয়ে, চলতে চাইলে, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা, সরকারের বিরুদ্ধে, সেদেশেরই বিরোধী মতের মানুষ কে ব্যবহার করে। কোন দেশের, অসচেতন জনগণের ক্ষেত্রেই তারা সফল হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mamunur Rashid ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:২৩ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ ইমরান খানের জয় হবে ইনশাআল্লাহ দোয়া ও শুভকামনা রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • Md Polash ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:২৩ এএম says : 0
    আমেরিকা ষড়যন্ত্র শুরু ইমরান খানের মতো প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের জীবনে আর হবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Saad Rahman ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:২৩ এএম says : 0
    এ সব অনাস্থা প্রস্তাবের চার পয়সারও দাম নাই।পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক হল তার সামরিক বাহিনী, তারাই সিদ্ধান্ত নেয় যে কোন ব্যক্তি বা দল দেশে ক্ষমতায় থাকবে। কাজেই ঐ সব গৃহপালিত বিরোধী দলের কর্মসূচিতে কোন লাভ হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Polash ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:২৩ এএম says : 0
    আমেরিকা সমস্ত রাষ্ট্রের হাত দিতে চায় যেখানে সুযোগ পায় সেখানেই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তানের

৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ