Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভাঙ্গায় মাঠে পেঁয়াজ চাষি লক্ষ্য বাম্পার ফলন

আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে স্বপ্ন অনেকটাই ভেস্তে যেতে বসেছিল! কিন্ত সেই দুঃসময় কাটিয়ে উঠে আজ পেঁয়াজ আবাদকারী কৃষক পরিবারগুলো নতুন আশায় বুক বেঁধে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। পেঁয়াজের বাম্পার ফলন উৎপাদন করে এ বছর ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার আশা করছেন পেঁয়াজ উৎপাদনের বিশেষ উপজেলা হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কৃষকরা।
সরেজমিনে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের গ্রামে ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফিরে দেখা গেছে, প্রত্যন্ত এলাকার মাঠের পরে মাঠে শীত মৌসুমের সকাল বেলায় শরীরে শীতের চাদর, মাথায় মাফলার, হাতে কাঁচি-কোদাল নিয়ে দলবদ্ধভাবে পেঁয়াজ চাষাবাদ করতে জমিতে নেমে পড়েছেন জমির মালিকসহ কৃষকরা। ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া, আলগী, চান্দ্রা, তুজারপুর, কালামৃধা, নাসিরাবাদ, মানিকদাহ, হামিরদী, চুমুরদী, আজিমনগর, কাউলীবেড়া ও নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা পৌর সদর এলাকায় প্রতিবছরের শুরু হয়েছে পেঁয়াজের আবাদ। ভাঙ্গা উপজেলায় মোট আবাদি জমির প্রায় ৯০% জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। এখন জমিতে পুরোদমে হালি পেঁয়াজ, কদম পেঁয়াজ, মুরিকাটা পেঁয়াজ রোপণের ধুম পড়ে গেছে। বিশেষ করে অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষকরা বীজ থেকে উৎপাদিত কদমবীজ চারা রোপণ করছেন মাঠের পর মাঠজুড়ে।
ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৯০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং ৪৩৫ হেক্টর জমিতে দানা পেঁয়াজের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৫ দিনে এর আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ২৫০০ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। গত বছর ভাঙ্গায় পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ বছর সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে মনে করছেন উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের কাউলীবেড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আলমাস মাতুব্বর জানান, তার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে পেঁয়াজ চারা রোপণের ধুম পড়ে গেছে। প্রতিদিন ভোর থেকে পেঁয়াজের চারা উত্তোলনের পর জমিতে রোপণ করা হয়। গত বছরে বৃষ্টিতে পেঁয়াজের চারার ক্ষতি হওয়ায় পেঁয়াজ চাষ কিছুটা কমে গেলেও আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যেই কিং জাতীয় পেঁয়াজ রোপণ সম্পন্ন হবে। তিনি আরও জানান, প্রতি বছর কাউলীবেড়ায় ১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। এ বছরের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের অনুক‚লে থাকলে নির্ধারিত আবাদের ফলন সবার ঘরে উঠে আসবে।
মুন্সুরাবাদ গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মোহাম্মাদ সম্রাট বলেন, আমি প্রতি বছর ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করি। এ বছর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে ১২ কেজি দানা কিনে বীজতলা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাসের প্রবল বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে সত্য কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে নতুন করে পেঁয়াজের ২০ হাজার টাকা খরচ করে কদম পেঁয়াজের চাষ করেছি। আশাকরি এ বছর ভালো ফলন হলে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা ঘরে আসবে।
ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার ইনকিলাবকে জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ভাঙ্গায় পেঁয়াজের বীজতলার আংশিক ক্ষতি সাধিত হয়। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের ২৩ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পেঁয়াজ চাষের ক্ষেত্রে যে একটি বিশেষ রোগবালাই পাতা পড়া রোগ বিষয়ে সজাগ থেকে সার্বিকক্ষণ কাজ করছে উপজেলা কৃষি অফিস। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা প্রদান করার পাশাপাশি রাজস্ব প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভাঙ্গার প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেঁয়াজ

১৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ