পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী

ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সবকয়টি গেট খুলে দেয়ায় তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৩০টি, কাউনিয়া উপজেলায় ১০টি ও পীরগাছা উপজেলার ৫টি গ্রাম হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। ওইসব গ্রামের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এছাড়া, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে ২ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম চলমান বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।
অন্যদিকে, লালমনিরহাটে তিস্তার নদীর প্রবল স্রোতে কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রেশ্বর মিলনবাজার এলাকায় লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক সড়ক ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাট-রংপুরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হুমকিতে রয়েছে তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুটিও।
জানা গেছে, ভারতে প্রবল বর্ষণ এবং পাহাড়ী ঢলের কারনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারেজের সবক’টি গেট খুলে দিয়েছে। এতে বুধবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বাড়তে শুরু করে এবং ১২টা নাগাদ ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি এবং পানির প্রবল ¯্রােতে তিস্তা ব্যারেজ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ড রেড এ্যালার্ট জারি করে এবং তিস্তার চরাঞ্চলসহ আশপাশের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আকস্মিক এবং অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারনে তিস্তা বিধৌত নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে একের পর এক গ্রাম তলিয়ে যেতে শুরু করে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে বিভিন্ন বাঁধ। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পানির প্রবল ¯্রােতে ভেঙে যায় তিস্তা ব্যারেজের লালমনিরহাট অংশের একটি ফ্লাড বাইপাস। নি¤œাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারী জেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ নামক স্থানে প্রায় ৪’শ মিটার গ্রোয়েন বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে করে ওই উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারীসহ ১০টি ইউনিয়ন এলাকার ২৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ। চরাঞ্চলের এসব এলাকার বাড়িঘরে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি উঠেছে। পানির নিচে তলিয়ে যায় এলাকার সকল রাস্তা-ঘাট।
গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ, মর্নেয়া, লটারি, আলমবিদিতর, নোহালী, কচুয়া এবং গজঘণ্টা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে এখনও হাটু থেকে কোমর পরিমাণ পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় শত শত পরিবার বাড়ি ছেড়ে তিস্তা নদী রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানিয়েছেন, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়লেও এখন কমতে শুরু করেছে। ডালিয়া ও গঙ্গাচড়া পয়েন্টে পানি কমেছে। কাউনিয়া পয়েন্টেও কমতে শুরু করেছে। রাতের মধ্যে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কুড়িগ্রামে বুধবার দুপুর থেকে উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। সন্ধ্যা থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে পানি। আকস্মিক তীব্র পানি প্রবাহ দেখে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধের রাস্তা ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এছাড়া বুধবার স্থানীয় ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ ওই স্থানগুলোতে রেড এলার্ট জারি করেন। ভারতের গজল ডোবার সবকটি গেট খুলে দেয়ায় এবং তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাট বাইপাস ভেঙে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দেয়ার কারণে রাজারহাটসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বৃস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম জানান,ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ১০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে এবং আরো ১হাজার ২শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্ততি চলছে।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান : সকালে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার। যা বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ মিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বুধবার (২০ অক্টোবর) বেলা ১২টায় এ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তা নদীর পানি। ২৪ ঘণ্টা পরেই পানি প্রবাহ কমে গিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারসকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটেছে।
হঠাৎ পানি বাড়ার কারণে বুধবার তিস্তার উভয় তীর উপচিয়ে প্রবাহিত হয়। ডুবে নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর জমির উঠতি আমন ফসল ও রোপা আমন সহ আগাম আলু ক্ষেত, মুলা, বেগুন, বাদাম, শাক সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে প্রায় ৫ শত পুকুরের মাছ। পানি তোড়ে ভেঙে গেছে আদিতমারীর মহিষখোচার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধা(ওয়াব্দা), কালীগঞ্জের কাকিনা রংপুর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার সড়ক সমূহ।দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাক উদ দৌলা বলেন, পানি প্রবাহ বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। বন্যা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, বন্যার্তদের জন্য ৭০ মে. টন চাল ও ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।