পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নেপাল সীমান্ত নিয়ে বিরোধের পর ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানেও ভারতের বাংলা চ্যানেল দেখানো হয় না। কোলকাতার বাংলা চ্যানেলসহ ভারতীয় চ্যানেলগুলোর একচেটিয়া বাজার ছিল বাংলাদেশে। নাটক-সিরিয়ালে পারিবারিক বিরোধ, সামাজিক কূটচাল, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুড়ির চুলোচুলি দেখিয়ে সমাজকে কলুষিত করতে বাংলাদেশের দর্শকদের উদ্বুদ্ধ করতো। আকাশ সংস্কৃতির নামে হিন্দুত্ববাদী অপসংস্কৃতি প্রচার করতো। এছাড়া পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতো। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষ চায় ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করা হোক। দেরিতে হলেও বাংলাদেশে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
‘ভারতসহ বিদেশি চ্যানেলগুলো তাদের মূল কনটেন্টের সাথে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না’ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণেই মূলত ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাটকো, বিদেশি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউটর, আকাশ ডিটিএইচ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। আবার ‘বিজ্ঞাপন প্রচার ছাড়া বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার সম্ভব নয়’ এমন যুক্তি দেখিয়ে সম্প্রচার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত এসেছে কেবল অপারেটরদের দিক থেকে। ফলে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই দেশে কোনো বিদেশি চ্যানেল দেখা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, এ মুহূর্তে ব্রডকাস্ট অপারেটরেরা বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার করতে চাচ্ছে না। আসলে এখনও দেশে সময় আসেনি বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে বিদেশি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করার। ফলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিদেশি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।
ভারতের কোলকাতার বাংলা চ্যানেলগুলো কার্যত হিন্দুত্ববাদী অপসংস্কৃতি প্রচারের মিশন নিয়ে ব্যস্ত। তারা প্রগতিশীলতার নামের অশ্লীল-শঠতা-কূরুচিপূর্ণ নাটক-সিরিয়াল-অনুষ্ঠানাদি প্রচার করে থাকে। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছিলেন, ‘কোলকাতার বাংলা চ্যানেলগুলোর সিরিয়াল দেখলে পরিবার-সমাজ নষ্ট হয়ে যায়। কূটিলতা-ঝগড়া-বিবাদ-বউ-শাশুড়ির চুলোচুলির বদলে গঠনমূলক-শিক্ষনীয় অনুষ্ঠান দেখাতে হবে’।
এর আগে হাইকোর্ট বাংলাদেশে কোলকাতার ৪টি বাংলা চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন সব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে বিদেশি চ্যানেলগুলো দেখতে গেলে টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে একটি বার্তা দেখা যায়। সেখানে লেখা ছিল- ‘গ্রাহকদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ১ অক্টোবর থেকে বিজ্ঞাপনবিহীন ছাড়া কোনো বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা যাবে না। তাই পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছি’।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কেবল অপারেটররা নিজেদের মতো করে এই একই বার্তা দিচ্ছেন। মূলত কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাটকো, বিদেশি চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউটর, আকাশ ডিটিএইচ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে গত ২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বৈঠক করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বৈঠকের পর তিনি জানিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের সাথে বিজ্ঞাপন প্রচার করে বিদেশী চ্যানেল ১ অক্টোবর থেকে সম্প্রচার করা যাবে না। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ জানান, আইন অনুযায়ী দেশে বিদেশি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিন ফিড) সম্প্রচার বাস্তবায়নে ১ অক্টোবর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ১ অক্টোবর থেকে আমরা সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। কোনো বিদেশি চ্যানেলে ক্লিন ফিড দেখানো না হলে এবং মন্ত্রণালয়, টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যাবল অপারেটর ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে ক্যাবল লাইনে সম্প্রচারের জন্য টেলিভিশনগুলোর নির্ধারিত ক্রমের ব্যত্যয় হলে বা কোনো ক্যাবল অপারেটর আইন ভঙ্গ করে নিজেরা বিজ্ঞাপন, অনুষ্ঠান প্রদর্শন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আইনের অন্য কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ডাউনলিংকের অনুমতি পাওয়া ডিস্ট্রিবিউটদের এবং ক্যাবল অপারেটরদের ওপরই আইন ভঙ্গের দায় বর্তাবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মূলত বাংলাদেশের আইনে বিদেশি টেলিভিশনগুলোর বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ নেই। এ কারণে আগেও কয়েক দফায় বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার।
এ দফায় নতুন করে আবার একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আইনের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব হারানোর বিষয়টিও বড় করেই এখন চিন্তা করা হচ্ছে। বিদেশি চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলো থেকে একদিকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না, আবার ওই সব চ্যানেল বাংলাদেশে জনপ্রিয় হওয়ায় অনেক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য বিদেশি চ্যানেলকেই বেছে নিয়েছে। অবশ্য বিদেশি কিছু চ্যানেল বিশেষ করে ভারতীয় কিছু চ্যানেল বাংলাদেশে এতো বেশি জনপ্রিয় যে সেগুলো বন্ধ করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় চ্যানেলের দর্শক নেপাল ও পাকিস্তানে বেশি। কিন্তু ওই দুটি দেশ ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু নানা কূটকৌশল করে ভারতীয় চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে সম্প্রচার অব্যাহত ছিল। অথচ বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো ভারতে দেখানো হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদী সরকার আবার পর্দার আড়ালে কূটকৌশল করে আবার ভারতীয় চ্যানেলগুলোর বাংলাদেশে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারে। তবে গত ২০ বছরে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের বিপ্লব ঘটে গেছে। কিন্তু ঢাকা থেকে সম্প্রচারিত চ্যানেলগুলোতে যে মানের নাটক-সিরিয়াল, অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় তা খুবই নিম্নমানের। সন্ধ্যা হলেই প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। ওই সব গান দর্শক শোনে না বললেই চলে। খবর, টক-শো’তে সরকারকে তোষামোদীর কারণে ঢাকার চ্যানেলগুলো দর্শকরা দেখেই না। আবার যে সব অনুষ্ঠান ও খবর লাইভ প্রচার করা হয় তা দেখে মানুষ হাসাহাসি করেন। ভারতীয় তথা কোলকাতার চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখতে হলে ঢাকার চ্যানেলগুলোর নাটক-সিরিয়াল ও অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে হবে। দর্শক গ্রহণ করে এমন নাটক- সিরিয়াল প্রচার করতে হবে। গানের অনুষ্ঠান করতে হবে মান সম্পন্ন শিল্পীদের নিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।