Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যশোরের র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো সেই লিমন জামাই হলেন

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:০৩ পিএম

র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো সেই লিমন আবদ্ধ হলেন বিয়ের বন্ধনে। কনে যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর এলাকার সরখোলা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম টিটোর বড় মেয়ে রাবেয়া বসরী (১৯)। শুক্রবার দুপুরে কনের বাড়িতে ২ লাখ টাকা দেনমোহরে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। লিমন হোসেন ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে।
দশ বছর আগে র‌্যাবের গুলিতে লিমনের পা হারানোর ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময় লিমনের পা হারানোর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনা জন্ম দিয়েছিল। সেই সময় প্রশ্নের মুখে পড়েছিল র‌্যাবের এই অভিযান। সেই লিমন এখন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী প্রভাষক।
বর লিমন হোসেন জানান, বাবা-মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে তিনি বিয়ে করেছেন। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন। রাবেয়া এ বছর নওয়াপাড়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
ঢাকা গণবিশ্বাবিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের প্রধান ড. ফুয়াদ হোসেন জানান, কনে রাবেয়া বসরী সম্পর্কে আমার ভাতিজি হয়। একই কর্মস্থলে থাকার কারণে লিমনের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই সূত্রধরে গত ৬ মাস ধরে উভয় পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ শুরু করা হয়। আজ শুক্রবার সেই যোগাযোগের অবসান বিবাহবন্ধনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে।
লিমনের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন জানান, আমার ছেলেকে তো মেরেই ফেলেছিল। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়েছেন। বিয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ওদের দুইজনের জন্য আপনারা সকলে দোয়া করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকালে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ির পাশের একটি বাগানে নিয়ে লিমনের পায়ের গুলি করেন র‌্যাব সদস্যরা। এরপর লিমনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও অস্ত্র রাখার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমনকে বাঁচাতে তার গুলিবিদ্ধ পা কেটে ফেলে চিকিৎসকরা। এরপর লিমনের মা বাদি হয়ে র‌্যাব বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ঝালকাঠি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকালে মায়ের সঙ্গে মাঠে গরু আনতে গিয়েছিলেন লিমন হোসেন। এসময় তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়জন র‌্যাব সদস্য সেখানে উপস্থিত হন। লুৎফর রহমান নামে এক র‌্যাব সদস্য লিমনের শার্টের কলার ধরে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সন্ত্রাসী আখ্যা দেন। লিমন তখন র‌্যাব সদস্যদের বলেছিল সে সন্ত্রাসী নয়, একজন ছাত্র। এরপর র‌্যাব সদস্য লুৎফর রহমান মাথায় গুলি না করে লিমনের পায়ে গুলি করেন।
মামলা চলাকালিন সময় কারাগার হাসপাতালে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যান লিমন। জামিনে বেরিয়ে ২০১৩ সালে পিরোজপুরের কাউখালী কাঠালিয়া পিজিএস বহুমুখি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ২০১৮ সালে ঢাকা সাভারে গণবিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষা সহকারী পদে যোগদান করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আইন বিভাগের সহকারী প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন অদম্য লিমন হোসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ