Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বন্যা-নদী ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

ভারতের ঢলে পদ্মা-যমুনাসহ পাঁচ নদী বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত : উত্তর-মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি মোহনায় নদীভাঙন বিস্তৃত : বিভিন্ন জেলা উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত ভ

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, গড়াইসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকালও এসব নদীর পানি চারটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ পানি বন্দি জীবনযাপন করছে। ভারত ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তার উজানে গজলডোবাসহ সবক’টি বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দিয়েছে। উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাঙনও তীব্র হচ্ছে। বসতভিটা, ফল-ফসলি, জমি-জমা হারিয়ে রাতারাতি নিঃস্ব হচ্ছে অনেকেই। তলিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ জনপদ। নদীপাড়ের বাসিন্দাদের দিন কাটছে ভাঙন আতঙ্কে, অনিশ্চয়তায়। নদ-নদীগুলো পানি বেড়ে উত্তাল হওয়ায় ঘূর্ণিস্রোত সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে নৌ চলাচল ব্যাহত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভারত থেকে আসা ঢলে ভাসছে উত্তর জনপদে নীলফামারী-কুড়িগ্রাম থেকে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে পাবনা-রাজবাড়ী, দক্ষিণ-পশ্চিমে মাগুরা, সাতক্ষীরা হয়ে ভাটিতে শরীয়তপুর পর্যন্ত। দক্ষিণের উপক‚লও উত্তাল হয়ে উঠেছে। গতকাল শনিবার বিকাল পর্যন্ত পদ্মা, যমুনা, দুধকুমার, আত্রাই ও গড়াই নদী পাঁচটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বাভাসে জানায়, কুড়িগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে।

বন্যা ও নদীভাঙন নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট নিচে তুলে ধরা হলো :
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, ভারতের উজান থেকে আসা ঢলে দেশের বেশিরভাগ প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা ও যমুনা নদের কয়েকটি স্থানে পানি বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। প্রধান নদ-নদী ছাড়াও শাখা-প্রশাখা, উপনদী, খাল-খাঁড়িগুলোর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি মোহনা এমনকি দক্ষিণের উপক‚ল পর্যন্ত নদীভাঙন বিস্তৃত হচ্ছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে জানা গেছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, হিমালয় পাদদেশীয় ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাছাড়া মধ্য-ভারত, বিহারসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে তা অব্যাহত থাকতে পারে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, প্রধান নদ-নদীগুলোর ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪২টিতে হ্রাস পায়। দু’টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত থাকে। এরমধ্যে পাঁচটি নদী ৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার নদ-নদীর ৬৩টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪২টিতে হ্রাস ও ৩টিতে অপরিবর্তিত থাকে। তিনটি নদ-নদী বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার ৬৭ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৮টিতে হ্রাস ও তিনটি স্থানে অপরিবর্তিত ছিল। তিনটি নদী ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বুধবার ৬৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৭টিতে হ্রাস এবং ৩টি স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল।

প্রধান নদ-নদীগুলোর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে গতকাল পাউবো জানায়, সুরমা-কুশিয়ারা ব্যতীত দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদ আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

প্রধান নদ-নদীর প্রবাহের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গতকাল বিকাল পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, পদ্মা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৮টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গঙ্গা-পদ্মা নদীর বাংলাদেশে প্রবেশমুখে পাংখা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২১ সে.মি. নিচে, রাজশাহীতে ৬৫, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে মাত্র ৫, ভাগ্যকুলে ২৫, মাওয়ায় ২৮, সুরেশ^রে ২৯ সে.মি. নিচে রয়েছে।
উত্তর জনপদে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত যমুনা নদ মথুরা পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া যমুনা কাজীপুরে মাত্র ৯, সিরাজগঞ্জে ১২, আরিচায় ৩ সে.মি. নিচে এসে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরো বেড়ে গিয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সে.মি. নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার নদী কুড়িগ্রাম জেলার পাটেশ্বরীতে বিপদসীমার ৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে মাত্র ৮ এবং কুড়িগ্রামে ধরলা নদী রয়েছে মাত্র ৫ সে.মি. নিচে। উত্তর-মধ্যাঞ্চলে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঘাবাড়ীতে বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে। ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে এলাসিনে ১৬ সে.মি. নিচে রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়াই নদী মাগুরা জেলার কামারখালী পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়ায় বেতনা নদী বিপদসীমার ২৭ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে পদ্মা, মহানন্দা, পাগলা নদী ফুঁসে উঠেছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে জনপদ ফসলের ক্ষেত। ভাঙনের কবলে পড়েছে নদী তীরের মানুষ। মরা পদ্মা ফুঁসে উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নাটোরের লালপুর পর্যন্ত নদী তীরের আতঙ্কিত। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাজশাহীতে শহর রক্ষা গ্রোয়েনের উপর চাপ বেড়েছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারো বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার পুরনো বাঁধের বøক নিচে নেমে যাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। পানি এখন ১৭ মিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপদসীমার ১৮ দশমিক ৫০ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে রাজশাহী নগরীর ওপারে চরখানপুর এলাকা ভাঙতে ভাঙতে অস্তিত্ব বিলীনের পথে। এর আগে চরখিদিরপুর তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। রাজশাহীর বাঘা এবং গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মার ওপারের চর ভাঙছে। নতুন করে গোদাগাড়ীর নিমতলা এলাকায় পদ্মার এপার ভাঙছে। এই এলাকাটি আগে কখনও ভাঙেনি। এদিকে চাঁপাইনাবগঞ্জের পদ্মা, মহানন্দায় ও পাগলায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে, ২২ হাজার পরিবার পানিবন্দি ও ১৮৯ হেক্টর জমির ধান ও শাক-সবজি পানিতে ডুবে গেছে।

গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান : গাইবান্ধার সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া, খারজানী, পারদিয়ারা, কড়াইবাড়ি, পশ্চিমবাটিকা মাড়িসহ পার্শ্ববর্তী মোল্লারচর ও গিদারী ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এর ফলে কামারজানিতে ইউনিয়নের ৪৭৩টি পরিবার, মোল্লারচর ইউনিয়নে ৭৫টি পরিবার এবং গিদারি ইউনিয়নে ২৫টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চরমাদারি পাড়া, কারেন্ট বাজার ও পাড়া সাদুয়া গ্রামের ৫০টি পরিবারের বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, নদীভাঙন থেকে রক্ষা হলো না রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়াশাম বগুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তিনটি মসজিদসহ ৫ শতাধিক বসতভিটা, গাছপালা ও শতশত একর ফসলি জমি। রাজারহাটের তিস্তা নদীতে পানি উঠা-নামার কারণে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়। ফলে গত এক মাসের মধ্যে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম, নাখেন্দা ও খিতাবখাঁ মৌজার ৩ শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে বসতভিটে হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে অনেক পরিবার। এদিকে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ, চর-খিতাবখাঁ, গতিয়াশাম, সরিষাবাড়ি ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, তৈয়বখাঁ, চতুরা, কালিরহাট, চরবিদ্যানন্দসহ ১০টি গ্রামে দফায় দফায় নদীভাঙনে চলতি মৌসুমে ৫ শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েক দিন থেকে পানি ব্যাজে পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে আসছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ঢুকে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, জেলার তিস্তা নদীর পানি সকালে কমলেও বিকালে বাড়ছে। আবার বিকালে বাড়ছে তো সকালে কমছে। ফলে তিস্তা ধরলা নদীর অববাহিকার চরগ্রামগুলোতে টানা ৭ দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে করে জেলার চরাঞ্চলের ১৭টি গ্রাম ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় কয়েক হাজার পরিবার প্লাবিত হয়ে থাকছে। বিশেষ করে জেলার সানিয়াযান, গড্ডিমারি, সির্ন্দুনা, ডাউয়াবাড়ি, ভোটমারি, মহিষখোচা, গোকুন্ডা, রাজপুর, কুলাঘাট, মোগলহাট এলাকা কয়েকশ’ পরিবার সব থেকে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে।

নীলফামারী থেকে মুশফিকুর রহমান সৈকত জানান, তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং ৯টায় ৫ সেন্টিমিটার কমে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে দুপুরের পর থেকে তিস্তার পানি কমতে থাকে। এদিকে পানির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১৫টি চরগ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। ওই সব এলাকায় অনেক স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় অনেক পরিবার অন্যত্র সরিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

শরীয়তপুর থেকে মো. হাবিবুর রহমান হাবীব জানান, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে ভাঙন অব্যাহত থাকায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পরেছে। ভাঙন পূর্ববর্তী এক সপ্তাহে ৮০টি পরিবার তাদের বসত বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। ভাঙনে ৩০০ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এদিকে বর্ষার পানি বেড়ে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপদসীমার ৪.৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টায় ৪.৪১ ও বেলা ১২টায় ৪.২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী রেহানা আক্তার।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে মো. মাহফুজুল আলম জানান, পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের মধ্যে ১৭টি গ্রাম ও চিলমারী ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হওয়ায় ওইসকল গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও পশুখাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বেড়েছে তাদের চরম দুর্ভোগ দুর্দশা।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে মো. শওকত হোসেন জানান, লৌহজং উপজেলায় ইছামতি নদীর (ডহরি-তালতলা খাল) তীরবর্তী এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। আশপাশের গ্রাম ও বসতভিটা। গত ১ সপ্তাহে পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের ১০টি পারবারের জমি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। উপজেলার নদী-তীরবর্তী গ্রামের শত শত পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ধলেশ্বরী নদীর তালতলা দিয়ে এই খালটি লৌহজংয়ের ডহরি দিয়ে পদ্মায় গিয়ে মিলিত হয়েছে। ইছামতী নদীর শাখা নদী হিসেবে পরিচিত (ডহরি-তালতলা খাল) ভাঙনে উপজেলার নদী পাড়ের ইউনিয়নগুলোর বেশিরভাগ এলাকা নদীভাঙনের কবলে পরেছে। হুমকির মুখে রয়েছে কলমা ও গাঁওদিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে বসতঘর বাজার মাদ্রাসা সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা-নদী ভাঙন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ