পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে এবং শাখ-প্রশাখা, উপনদীগুলোর পানি হ্রাস-বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কোথাও কোথাও পানি স্থিরাবস্থায় বা অপরিবর্তিত আছে। সেই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলে তিস্তা-ধরলা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকা থেকে শুরু করে উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল হয়ে পদ্মা-মেঘনার ভাটি ও মোহনা অবধি নদীভাঙন হচ্ছে ব্যাপক আকারে। নদ-নদীর ঘূর্ণিস্রোতে ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি, ক্ষেত-খামার হারিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছে হাজারো পরিবার। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকার মজিদ শেখের পাড়ায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে হঠাৎ করে পদ্মায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বিলীন হয়েছে অন্তত পনেরটি বসতবাড়ি। অন্যদিকে, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হবতপুর গ্রামের ২৫ পরিবারের ফসলি জমি আর বসত ভিটা নদীর ভাঙনে চলে গেছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র তথ্যনুযায়ী, দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ৪১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৬৩টিতে হ্রাস পায়। ৪টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। সোমবার নদ-নদীর ৩৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৬৭টিতে হ্রাস পায়। রোববার ৪১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৬৩টিতে হ্রাস পায়। শনিবার ৩৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৭০টিতে হ্রাস পায়।
নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে পাউবো জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল রয়েছে, অন্যদিকে যমুনা নদে পানি হ্রাস পাচ্ছে। উভয় নদ-নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা ও সোমেশ্বরী ব্যতীত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে শিলচরে ৮৩, আইজলে ৫২, তেজপুরে ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে একই সময়ে দেশের অভ্যন্তরে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। এরমধ্যে সুনামগঞ্জে ৯৫, লালাখালে ৯১, সিলেটে ৮৪, কানাইঘাটে ৭০, মহেশখোলায় ৬৮, ছাতকে ৪৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।
রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন মজিদ শেখের পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চোখের পলকেই গাছ পালা, বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় যে যার মতো করে পারছে নিজ নিজ সম্বল সরাতে ব্যস্ত।
এছাড়াও দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দৌলতদিয়া পাটুরিয়ার দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পল্টুন ঘাট থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আপাতত ঘাট স্থাপন না করা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে লঞ্চ চলাচল জানিয়েছেন লঞ্চঘাটের ম্যানেজার।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, চোখের নিমিষেই মানুষের ঘরবাড়ি বসতভিটা নদীতে চলে যাচ্ছে। এমন হাহাকার দেখার যেন কেউ নেই। তিনি দাবি করেন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত এক ঘন্টায় অন্তত ১৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আশরাফুল ইসলাম আশরাফ বলেন, আমরা ঘাট কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যপারে বলেছি। কিন্তুু তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি যে কারণে আজ ১৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সরিয়ে নিতে হয়েছে আরো অন্তত ৫০টি বসতবাড়ি। নদী ভাঙনরোধে দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র) রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল আহাদ বলেন, ঘাট এলাকায় আমাদের ভাঙনরোধে দুটি প্যাকেজ চলমান আছে। তাছাড়া ১ নম্বর ঘাট থেকে ৭ নম্বর ঘাট পর্যন্ত বিআইডব্লিটিএ’র কাজ করার কথা। যেহেতু হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দিয়েছে আমরা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে আজ সকাল থেকেই কাজ শুরু হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুল হক খান মামুন বলেন, হঠাৎ করে পদ্মায় নদীর লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে বেশ কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের কথা জানার পর প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হবতপুর গ্রামের ২৫ পরিবারের ফসলি জমি আর বসতভিটা সুরমা নদীর ভাঙনে চলে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুরমা নদীর তীর ভাঙন এখনো অব্যাহত রয়েছে। ভাঙেন কবলিত অংশ থেকে নিজেদের বসতঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন অনেকই আবার তাদের কেউ মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু নদীগর্ভে হারিয়ে বিপাকে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দিন দিন ভাঙনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দা। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ভাঙনরোধে সরকার কাছে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানান।
ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, আবুল কালাম আপ্তাব উদ্দিন, জুনাব আলী, আতর আলী, হুসেন আলী, শফিকুল ইসলাম, আজাদ মিয়াসহ অনেকেই জানান করোনার কারণে কাজকর্ম নেই। করোনা আর নদী ভাঙনে আজ দিশেহারা এই অবস্থায় পেটের খাবার জোটাবো নাকি মাথা গোজার ঠাই খুঁজবো। আমাদের খোঁজ-খবর কেউ রাখেনি আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নেই।
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছু দোহা বলেন আমি কিছু দিন হয় দায়িত্ব নিয়েছি। সদর উপজেলার হবতপুর গ্রামের সুরমা নদীর ভাঙন কবলিত স্থান সরে জমিনে দেখে স্থায়ী নদী শাসনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।