Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাংবাদিক রোজিনা মুক্তি পেলেন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেলে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। রোজিনা গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। এর আগে গতকাল সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর ভার্চুয়াল আদালত পাসপোর্ট জমা দেয়ার শর্তে ও পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে আদালত থেকে তার জামিনের কাগজপত্র কারাগারে গিয়ে পৌঁছায়। আদালতে জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কারা মুক্তি দেয়া হয়।
মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকতা চালিয়ে যাব। সাংবাদিকসহ যারা পাশে ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ।

পুলিশ ও কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয় থেকে নথি চুরির অভিযোগে তার নামে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে মামলা করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মামলায় একরাত থানা হাজতে ও পাঁচ দিন কারাগারে থাকার পর জামিন পেলেন রোজিনা। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার ২০ মে রোজিনার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য রোববার দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন এই আদালত। তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ভার্চুয়াল আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের (সিএমএম) পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার বক্তব্যে বলেন, শর্তসাপেক্ষ অন্তর্বতীকালীন জামিন দেয়া যেতে পারে রোজিনা ইসলামকে। আসামিপক্ষের এহসানুল হক সমাজী তার বক্তব্য সমর্থন করেন। পরে পাসপোর্ট জমা দেয়া ও পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে রোজিনা ইসলামকে জামিন দেয়া হয়।
এর আগে, সোমবার ১৭ মে রাতে শাহবাগ থানায় মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার ১৮ মে রোজিনাকে আদালতে নেয়া হয়েছিল। ওই দিন পুলিশের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দিয়ে এবং রোজিনার জামিন আবেদন অনিষ্পন্ন রেখে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। পরে বৃহস্পতিবার জামিন আবেদনের শুনানি নেন আদালত। পরে জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য রোববার দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।

এর আগে, সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান রোজিনা ইসলাম। সেখানে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় তাকে আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা এবং ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় মামলা করা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই মামলায় শাহবাগ থানা পুলিশ রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার দেখায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব দাফতরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করার সময় রোজিনা ইসলাম তার কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি দাফতরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের ছবি মোবাইল ফোনে তোলেন এবং কিছু কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে ফেলেন। এসময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান তাকে বাধা দিলে রোজিনা ইসলাম নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতারের পর থেকেই তার মুক্তির দাবিতে সরব হয় দেশের সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলো। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও। সিনিয়র এই সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা ছিল বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিসহ দেশের প্রায় সব সাংবাদিক সংগঠনের। রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি টানা পালন করে আসছেন সাংবাদিকেরা।

রোজিনার মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি: সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের দুটি মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকি বিল্লার আদালত এ আদেশ দেন। এ দিন সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মোর্শেদ হোসেন খান রোজিনা ইসলামের দু’টি মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। আদালতের শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা (জিআর) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আচরণে গণমাধ্যম ভূমিকা রাখে: আদালতের অভিমত: দণ্ডবিধি এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পাসপোর্ট জমা দেয়ার শর্তে জামিন দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ভার্চুয়ালি দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে রোববার সকাল পৌনে ১১ টার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ এ আদেশ দেন। এখন অপেক্ষা মুক্তির।
আদেশে আদালত বলেন, আসামির জামিন পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে (মুচলেকা) মঞ্জুর করা হলো। আসামিকে তার পাসপোর্ট আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হলো।
আদালত আরো বলেন, গণমাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। গণমাধ্যম অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আচরণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুতরাং কোর্ট এবং গণমাধ্যম কখনোই একটি আরেকটির জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে না। কোর্ট সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। সুতরাং আমরা আশা করব যে, উনি (রোজিনা ইসলাম) ওনার দায়িত্ব পালনে আরো সচেতন থাকবেন।

চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে: জামিনে কারামুক্ত রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। রোববার বিকেল ৬টা ২৫ মিনিটের দিকে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর তাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়েছে। শারীরিক সমস্যার কারণে তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু। স্বামী ছাড়াও রোজিনা ইসলামের মেয়ে আলভিনা ইসলাম (৯) তার সঙ্গে রয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ