Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে বেড়াতে এসে বাংলাদেশী পর্যটকরা কীরকম খরচ করেন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২১, ৮:৫৯ পিএম

ভারতে বাংলাদেশী পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী পর্যটক সে দেশে যাচ্ছে। ভারতে এসে বাংলাদেশী পর্যটকরা কীরকম টাকা-পয়সা খরচ করেন বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নে ভারতের পর্যটনমন্ত্রীর বলেন, পশ্চিমা পর্যটকদের চেয়ে বাংলাদেশীদের খরচ করার পরিমাণ কিন্তু কোনও অংশে কম নয়।

বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, পাঁচতারা হোটেল বা বিমানের বিজনেস ক্লাসে তেমন না করলেও বাংলাদেশীরা কেনাকাটায় আর মেডিক্যাল বিলে ভারতে একটা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেন। আর সে কারণেই ভারত চাইছে সে দেশ থেকে আরও বেশি পর্যটক আসুন।

বর্তমানে ভারতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে বাংলাদেশ থেকে। গত বছর তিনেক হলো যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে সে জায়গাটা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস থেকেই এখন বিশ্বের যে কোনও ভারতীয় মিশনের চেয়ে বেশি ভিসা মঞ্জুর হয়, আর প্রতি বছরই অন্তত ১৬ থেকে ১৭ লক্ষ বাংলাদেশী এখন ভারতে আসছেন।
ভারতে পশ্চিমা দেশগুলোর পর্যটকদের মতো বেড়াতে এসে বাংলাদেশীরা অতটা খরচ করেন না বলে যে ধারণা আছে- ভারতের পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসোর মতে সেটা সম্পূর্ণ ভুল।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশী টুরিস্টরা কিন্তু এখানে এসে প্রচুর টাকা খরচ করেন। তাদের খরচের জায়গা মূলত দুটো- বিয়ের জন্য কেনাকাটা, আর মেডিকেল ট্যুরিজম।’ তারা এই দুই খাতে বিপুল খরচ করেন। কাজেই আমি তো খুব খুশি, বাংলাদেশীদের বলব আপনারা আরও বেশি করে আসুন!’

ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকা থেকে যে পর্যটকরা ভারতে আসেন, তারা তাদের বাজেটের একটা বড় অংশ খরচ করেন পাঁচতারা হোটেলে কিংবা প্যালেস অন হুইলসের মতো বিলাসবহুল ট্রেনে বা পরিবহনে।

দিল্লিতে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটরস প্রধান প্রণব সরকার বলেন, বাংলাদেশী পর্যটকদের যে খরচের প্যাটার্ন তাতে এ দেশের পর্যটন খাত হয়তো সরাসরি ততটা লাভবান হচ্ছে না - কিন্তু দেশের অর্থনীতির জন্য তা অন্যভাবে সুফল বয়ে আনছে।

মি সরকার বিবিসিকে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশীদের জন্য হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রির হয়তো তেমন লাভ নেই, কারণ অনেক সময়ই তারা চেনাজানা বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেই থাকছেন এবং লো বাজেটেই তাদের চলে যাচ্ছে।’

‘একজন ইউরোপিয়ান ট্যুরিস্ট যদি গড়ে দৈনিক একশো ডলার খরচ করেন, বাংলাদেশীরা কিন্তু কুড়ি থেকে পঁচিশ ডলারের মধ্যেই খরচটা সীমিত রাখছেন। মানে ইউরোপীয়দের তুলনায় গড়ে একজন বাংলাদেশী আমাদের পর্যটন খাতে মাত্র পঁচিশ শতাংশ খরচ করছেন।’

‘কিন্তু তারা সেটা পুষিয়ে দিচ্ছেন অন্য জায়গায়। বিয়ের কেনাকাটার নানা জিনিসপত্র বিপুল পরিমাণে কিনে আর মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য যারা আসছেন, তারা হাসপাতালের বিল মিটিয়ে মোট খরচের অঙ্কটা পশ্চিমাদের মতো সেই একই দাঁড়াচ্ছে", বলছিলেন প্রণব সরকার।

ওদিকে পশ্চিমা পর্যটকদের মধ্যে একটা বড় অংশ থাকে ব্যাকপ্যাকার বা খুব কম বাজেটের পর্যটক - তাদের স্যুভেনির কেনার প্রায় কোনও বালাই-ই নেই।

অন্য শ্বেতাঙ্গ পর্যটকদের মধ্যেও কেনাকাটার বাতিক অতটা থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশীরা এখানে বিরাট ব্যতিক্রম, বলছিলেন কলকাতার হিন্দুস্তান ট্র্যাভেলসের শিবানী ভট্টাচার্য।

তার কথায়, ‘কলকাতায় আসা বাংলাদেশীদের প্রধান টার্গেটই থাকে শপিং। তাদের জন্য ট্র্যাভেল প্ল্যান করার সময় আমাদের সব সময় বলা হয়, অন্তত একটা পুরো দিন যেন কেনাকাটার জন্য বরাদ্দ থাকে! আসলে কলকাতায় আধুনিক ফ্যাশনেবল জামাকাপড় ও অন্যান্য আরও নানা জিনিস তুলনায় সস্তায় পাওয়া যায়, এই ধারণা থেকেই বোধহয় সেটা করা হয়!’

‘পশ্চিমা দেশের পর্যটকরা যে একেবারে কেনাকাটা করেন না, তা নয়। তারা যত বেশি সম্ভব ঘুরতে চান। কিন্তু তারাও জিনিসপত্র কেনেন, তবে বড়জোর দু-একটা। কিন্তু বাংলাদেশীরা ব্যাগ বোঝাই করে কিনে নিয়ে যান’, বলছিলেন তিনি।

এছাড়া আজমির শরিফের মতো তীর্থস্থানে গিয়েও অনেক অর্থ খরচ করেন বাংলাদেশীদের একাংশ। আর কলকাতার নিউ মার্কেট কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশীদের খুব প্রিয় জায়গা।
ভারতের পর্যটন বিভাগ বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেইন, প্রোমো বা রোড শো-র মাধ্যমে চিরকাল পশ্চিমা দেশের পর্যটকদেরই টানার চেষ্টা করে এসেছে, কিন্তু পর্যটনমন্ত্রী কে জে আলফানসো বিবিসিকে বলছিলেন সেই দৃষ্টিভঙ্গি এখন পাল্টানো হচ্ছে।

তিনি জানান, ‘আমার দেশে সাদা, কালো না বাদামি চামড়ার পর্যটক আসলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। যতক্ষণ তারা এদেশে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, আমার পকেটে টাকা আসছে আর ভারতকে দেখে তারা বলছেন 'বাহ্, কি সুন্দর দেশ' তাতেই আমরা খুশি।’

‘আর বাংলাদেশীরা কেনই বা ভারতে আসবেন না - এত কম খরচে এত ভাল ডাক্তার আর চিকিৎসা পরিষেবাই বা তারা কোথায় পাবেন? আমেরিকা-বিলেতের চেয়ে খরচের ভগ্নাংশেই তারা এখানে দারুণ চিকিৎসা পাবেন’, জানাচ্ছেন তিনি।

মাত্র দিনকয়েক আগেই ঢাকায় উদ্বোধন হয়েছে সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতের বৃহত্তম ভিসা সেন্টার, বাংলাদেশীদের জন্য অনেক শিথিলও করা হয়েছে ভারতীয় ভিসার কড়াকড়ি। আর পর্যটনমন্ত্রীর কথা থেকেই স্পষ্ট, কেন বাংলাদেশী পর্যটক টানতে আরও মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত! সূত্র : বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ