Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে নিয়মিত ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছেনা কেন বাংলাদেশ?

বিবিসির প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

ভারতীয় রেলপথ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নেপালে ২৭ হাজার টন সার রপ্তানির জন্য ট্রানজিট সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই সার বোঝাই ট্রেনটি ভারতীয় রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন।
বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে নানা সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের কাছ থেকে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশী পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য ট্রানজিট সুবিধা চেয়ে আসছে।
মূলত বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে ১৯৭৬ সালে যে ট্রানজিট চুক্তি হয়েছিলো। তাতে কিছুটা সংশোধনী এনে গত বছরের অগাস্টে রেলপথে নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলো বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহানপুর থেকে ভারতের সিঙ্গাবাদ হয়ে নেপালের বীরগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা তৈরি হওয়ার কথা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই রেলপথ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নেপালে ২৭ হাজার টন সার রপ্তানির জন্য ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে ভারত। সামনে আরো ২৫ হাজার মেট্রিক টন সার একই পথে নেপালে যাবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সাথে এ যোগাযোগ নিয়মিত হলে বাংলাদেশের মংলা, চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের ব্যবহার বিস্তৃত হতো। নিয়মিতভাবে ভারতীয় ভ‚মি ব্যবহার করে ভুটান ও নেপালে বাণিজ্যের জন্য একটা চুক্তি কিন্তু হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়মিত হলেই তা বাংলাদেশের জন্য কার্যকর হবে। আবার তারাও বাংলাদেশের পোর্টগুলো ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করতে পারবে।
ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির প্রথম ভারতীয় পণ্যের চালান নিয়ে আসা জাহাজ গত জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ ভারতকে প্রায় সব ক্ষেত্রে ট্রানজিট সুবিধা দিলেও ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী যানবাহনের নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট সুবিধা নিয়মিত হয়নি।
এবার নেপালে সার রপ্তানির ট্রানজিট দিয়ে ভারতীয় পক্ষ বলছে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে মোটর চলাচল বা বিবিআইএন সংযোগ এবং উপ আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হিসেবে নেপালে সার রপ্তানির জন্য ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে তারা। কিন্তু এভাবে বিশেষ অনুমতির বদলে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে কবে ভুটান ও নেপালে পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে সেটি এখনও বড় প্রশ্ন।
গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ এ জন্য দায়ী করছেন বাংলাদেশের প্রস্তুতির অভাব ও ভারতের বড় ভাই সুলভ আচরণকেই। তিনি বলেন, ভারতের বড়ভাই সুলভ আচরণের পাশাপাশি আমাদেরও প্রস্তুতির অভাব ছিলো; যা এখন পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতার একটি বিষয় আছে। এখন সেভেন সিস্টার্সকে ঘিরে খুব প্রস্তুতি নিয়ে কস্ট বেনিফিট পর্যালোচনা করে নেগোসিয়েশন নিয়মিত রাখতে পারলে ট্রানজিট সুবিধা নিয়মিত পাওয়া যেতে পারে।
নেপালের পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের বন্দর ব্যবহার করতে হয় যা বাংলাদেশকে ট্রানজিট না দেয়ার একটি বড় কারণ বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ। অথচ ভারতকে ট্রানজিট বিষয়ে প্রায় সব সুবিধাই দিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় ভারতীয় জাহাজ চট্টগ্রামে আসার পর তাদের আনা পণ্য চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া ও আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে ভারতের ত্রিপুরা ও আসামে গেছে গত জুলাইয়ে। কাজ চলছে মংলা বন্দর ব্যবহার নিয়েও।
কিন্তু বাংলাদেশ কেন নিয়মিতভাবে ভারতের ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন কিছু বিষয়ে বিলম্ব হলেও দুদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চমৎকার থাকায় সব বাধাই ধীরে ধীরে কেটে যাবে বলে আশা করছেন তারা। তিনি বলেন, তিস্তার বিষয়টিই দেখুন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় সব চূড়ান্ত কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সরকার প্রধান বেঁকে বসলেন। এমন তাদের যে প্রদেশগুলো সেখানে বিভিন্ন সরকার ও তাদের নানা ইস্যু থাকে যা অনেক সময় বাধা হয়ে দাড়ায়। এখন কিন্তু আস্তে আস্তে এসব সমস্যা কেটে যাচ্ছে। তিনি আরো বলছেন বাংলাদেশ যে সুবিধা দিচ্ছে সেটার বিনিময়ে বাংলাদেশকেও নানাভাবে সহায়তা করছে ভারত। মংলা বন্দরের জন্য অর্থ সহযোগিতা দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনালের জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি আছে। পায়রাতে আছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথ সহ অন্য ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেও ভারতের ভূমিকা আছে।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহনে ভারতও এখন যেভাবে এগিয়ে আসছে তাতে খুব শিগগিরই আরও অগ্রগতি হবে আশা করছেন তারা। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ