নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সুমন খানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে গড়ে দেওয়া মঞ্চে নান্দনিক সব শটের মালা সাজালেন লিটন দাস। কোনোরকমে ফাইনালে ওঠা দলটিই শেষ পর্যন্ত গেয়ে উঠল বিজয় সঙ্গীত। ৭ উইকেটের দাপুটে জয়ে বিশেষ এই প্রেসিডেন্ট’স কাপের শিরোপা জিতে নিল মাহমুদউল্লাহ একাদশ।
প্রাথমিক পর্বের সফলতম দল শান্ত একাদশ পাত্তাই পেল না ফাইনালে। গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শান্ত একাদশকে ১৭৩ রানে আটকে রেখে মাহমুদউল্লাহরা ম্যাচ শেষ করে ১২২ বল বাকি রেখে। ফাইনালে আগুনে বোলিংয়ে মাহমুদউল্লাহদের জয়ের নায়ক সুমন। ২০ বছর বয়সী এই পেসারের শিকার ৩৮ রানে ৫ উইকেট। রান তাড়ায় দৃষ্টিনন্দন সব শটের পসরায় লিটন করেন ৬৯ বলে ৬৮। অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন ইমরুল কায়েস।
প্রতিপক্ষের এমন সাফল্যেও অবশ্য ¤øান হয়ে যাচ্ছে না ইরফান শুক্কুরের কীর্তি। টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত ব্যাট করা শান্ত একাদশের বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ফাইনালেও দলের চরম বিপর্যয়ে খেলেন ৭৫ রানের অসাধারণ ইনিংস। তবে সতীর্থদের ব্যর্থতায় দলটি পারেনি বড় স্কোর গড়তে। তবে দিনটি নিজের করে নিলেন লিটনও। মার্চে করোনাবিরতি শুরুর আগে যেখানে শেষ করেছিলেন, বিরতি শেষে সেখান থেকে শুরু করতে পারেননি এই টপ অর্ডার। লিগ পর্বে চার ম্যাচে করেন ১১, ০, ২৭ ও ৫ রান। অবশেষে নিজেকে ফিরে পেতে যেন বেছে নিলেন ফাইনালকেই।
নাজমুল একাদশের ১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাহমুদউল্লাহ একাদশ দলীয় ১৮ রানেই হারায় ওপেনিংয়ে নামা মুমিনুল হককে (৪)। দ্রæত ওপেনিং জুটি ভাঙলেও মাহমুদউল্লাহ একাদশ আর সুযোগ দিতে চায়নি নাজমুল একাদশের বোলারদের। লিটন-মাহমুদুল হাসানের দ্বিতীয় উইকেটে ৪৮ রানের জুটি। নাসুম আহমেদের বলে ১৮ রান করা মাহমুদুল ফিরলেও সেটি ১৭৩ রানের জবাব দিতে নামা মাহমুদউল্লাহ একাদশকে চাপে ফেলতে পারেনি। উইকেটে যে তখন দ্যুতি ছড়াচ্ছেন লিটন! ১০ চারে ৯৮.৫৫ স্ট্রাইকরেটে ৬৯ বলে ৬৮ রান করা লিটনের ইনিংস শেষ করে আসা উচিত ছিল। কিন্তু নাসুমকে কাট করতে গিয়ে বদলি উইকেটকিপার পারভেজ হোসেনের ক্যাচ হওয়ায় সেটি হয়নি। ইমরুল কায়েস দিয়েছেল তুলির শেষ আঁচড়। রিয়াদ-ইমরুলের তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করা ৬৩ রানই মাহমুদউল্লাহ একাদশকে নিয়ে গেছে জয়ের প্রান্তে। লিটনের ইনিংসটা মুগ্ধতা জাগানিয়া হলেও ইমরুলকে খুব বেশি পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে যেন গতকাল যেন ছক্কার নেশায় পেয়ে বসেছিল! ১ চারের বিপরীতে মেরেছেন ৬টি ছক্কা। ৫৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে ফিরেছেন ইমরুল।
এর আগে ঝলমলে রোদের মাঝেও ব্যাটসম্যানদের বেহাল দশা কাটেনি। উইকেট ছিল বরাবরের মতই। কিছুটা বাড়তি বাউন্স দেখা গেছে। তবে চাইলে টিকে থেকে রান বের করা যে দ‚রূহ ছিল না দেখিয়েছেন ইরফান। রুবেল হোসেনের প্রথম ওভারই সামলাতে পারেননি সাইফ হাসান। বার দুয়েক পরাস্ত হওয়ার পর স্টাম্পে টেনে বোল্ড হয়ে যান তিনি। দ্বিতীয় ওভারে চোখে কিছু একটা পড়ে যাওয়ায় মাঠ থেকে বেরিয়ে যান সৌম্য সরকার। মুশফিকুর রহিম নেমে ব্যাকফুট পাঞ্চ, কাভার ড্রাইভে দুই বাউন্ডারিতে থিতু হয়েছিলেন। পরে বলের মান দেখে খেলতে গিয়ে ছিলেন বাড়তি সতর্ক। কিন্তু সুমন খানের বলে রক্ষা হয়নি তার। প্রান্ত বদল করে আসা এই পেসারের ভেতরে ঢোকা বলে পরিষ্কার এলবিডবিøউ হয়ে ফেরা মুশফিক করেন ৩৫ বলে ১২ রান।
মুশফিকের আউটের পর মাঠে ফেরেন সৌম্য। কিন্তু বদলাতে পারেননি টুর্নামেন্টে তার বেহাল দশা। সুমনের বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে বিদায় নেন তিনি। খানিক পর তার আউটেরই রিপ্লে দেখিয়েছেন তিনি। ৪৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে শান্তর দল। অধিনায়ক শান্তর ঘাড়েই ছিল দলকে বাঁচানোর বড় ভার। ধীরলয়ে খেলে থিতুও হয়েছিলেন তিনি। তবে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব এসে তৈরি করেন চাপ। আরেক প্রান্তে বল করা মেহেদী হাসান মিরাজকে মেরে সেই চাপ সরাতে চেয়েছিলেন তিনি। ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে এক চার মারার পরের বলে লঙ অনে তুলে দেন সহজ ক্যাচ। ৬৫ রানে নেই তখন উপরের পাঁচ ব্যাটসম্যান। অমন চাপের মাঝে আরও একবার সাতে নেমে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ইরফান। পুরো টুর্নামেন্টেই দারুণ সফল এই ব্যাটসম্যান আগ্রাসী ব্যাট করে দলকে ফিরিয়ে আনেন খেলায়। এগিয়ে এসে সোজা লফটেড ড্রাইভে ছক্কায় শুরু করেছিলেন। পুল করেছেন দাপটে ভঙ্গিমায়, মাঝ ব্যাটে লাগিয়ে রান বের করেছেন নিয়মিত। ৪৫ বলেই ৫ চার ২ ছক্কায় তুলে নেন ফিফটি। ৬ষ্ঠ উইকেটে তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে যোগ করেন ৭০ রান। ৫২ বলে ২৫ করা হৃদয় মাহমুদউল্লাহর বলে পুল করতে গিয়ে তুলে দেন ক্যাচ।
শেষ দিকে উইকেট পড়তে থাকায় এক প্রান্তে ধরে এগুতে থাকায় খুব বেশি আগ্রাসী হওয়ার সুযোগ ছিল না ইরফানের। ৪৭তম ওভারে রুবেলের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরত যান তিনি। তিন ওভার আগেই অলআউট হয়ে যায় শান্তরা।
আসল সময় জ্বলে উঠলেন লিটন
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নাজমুল একাদশ : ৪৭ ওভারে ১৭৩। মাহমুদউল্লাহ একাদশ : ২৯.৪ ওভারে ১৭৭/৩। ফল : মাহমুদউল্লাহ একাদশ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : সুমন খান। সেরা ব্যাটসম্যান : ইরফান শুক্কুর। সেরা বোলার : সুমন খান। সেরা ফিল্ডার : নুরুল হাসান সোহান।
আসরের সেরারা
টুর্নামেন্ট সেরা : মুশফিকুর রহিম
টুর্নামেন্ট সেরা ব্যাটসম্যান : ইরফান শুক্কুর
টুর্নামেন্ট সেরা বোলার : রুবেল হোসেন
টুর্নামেন্ট সেরা ফিল্ডার : নুরুল হাসান সোহান
সেরা কামব্যাক প্লেয়ার : তাসকিন আহমেদ
সেরা প্রমিজিং প্লেয়ার : রিশাদ হোসেন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।