২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
প্রচন্ড গরমে চারদিক অস্থির। সেই সঙ্গে রয়েছে আর্দ্রতা। ফলে জনজীবন বির্পযস্ত। বাড়ছে গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা, রোগ-জরা। ঘামাচি কিংবা ড্রি-হাইড্রেশনের মতো সমস্যা প্রায় প্রত্যেকেরই হচ্ছে, আবার কেউ কেউ হিটস্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এর সঙ্গে হতে পারে অবসাদ, অ্যালার্জি, সূর্যরশ্মিতে পুড়ে যাওয়া, হজমের অভাবে বমি বা ডায়রিয়াজনিত রোগ ইত্যাদি।
গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয়, তা হল পানিসল্পতা। প্রচুর ঘামের কারনে পানির সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। এর ফলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে মাথা ঝিমঝিম করে। পানিস্বল্পতা গরমের খুবই সাধারন সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা মারাত্মক সমস্যা হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি এবং যারা বাইরে কাজ করেন এবং প্রয়োজন মতো পানি পান করার সুযোগ পান না, তারাই মারাত্মক পানিস্বল্পতায় আক্রান্ত হন বেশি। এ ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং কিডনির সমস্যা হওয়াও বিচিত্র নয়।
এছাড়াও গরমের কারণে ত্বকে ঘামাচি এবং অ্যালার্জি হতে পারে। গরমের কারণে অতিরিক্ত ঘাম তৈরী হয়, যার চাপে ঘর্মগ্রন্থি ও নালী ফেটে যায়। ফলে ত্বকের নিচে ঘাম জমতে থাকে। এটাই ঘামাচি। অনেক সময় ঘাম ও ময়লা জমে ঘর্মনালীর মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং সেখানে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। এতে ঘামাচি বা আ্যালার্জি বেড়ে যায় এবং ঘামে প্রচুর গন্ধ হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ছাড়া ঘামও ময়লার কারণে ছত্রাকজনিত রোগও এসময় বেশি হয়। গরমে যারা সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে বেশিক্ষন থাকেন তাদের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। এতে ত্বক লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া করে, চুলকায় এবং ফোস্কা পড়ে। মূলত সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিই এর জন্য দায়ী। যারা একটু ফর্সা বা যাদের ত্বক কোমল তাদের এ সমস্যা বেশি হয়। গরমের সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হল হিট ক্র্যাম্প দেখা দেয়, যাতে শরীরে ব্যথা করে, দুর্বল লাগে এবং প্রচন্ড পিপাসা লাগে। পরবর্তী সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মাথাব্যথা করে এবং অসংলগ্ন আচরন করতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। একে হিটস্ট্রোক বলে। এর লক্ষণগুলো তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায় ও ত্বক শুস্ক ও লাল হয়ে যায়, নিঃশ্বাস দ্রুত, নাড়ির স্পন্দন ক্ষীন ও দ্রুত হয়, রক্তচাপ কমে যায়, খিঁচুনি হয়, মাথা ঝিমঝিম করে এবং রোগী অসংলগ্ন ব্যবহার করতে থাকে। রোগীর প্রস্রাবের পরিমান কমে যায়, অজ্ঞান হয়ে যায়, এমনকি শকেও চলে যেতে পারে। গরমের সরাসরি প্রভাব ছাড়াও অন্য আনুষঙ্গিক সমস্যা হতে পারে। অনেকেই গরমে তৃষ্ণা মেটাতে বাইরে পানি বা শরবত খান, যা অনেক সময় বিশুদ্ধ হয় না। ফলে ডায়রিয়া ও বমিতে আক্রান্ত হতে পারেন। একই কারণে এ সময় পানিবাহিত অন্যান্য রোগ যেমন- টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি বেশি হয়। গরমে অনেকে প্রচুর পানিপান করেন, কিন্তু তাতে পর্যন্ত লবণ থাকে না, ফলে লবণের অভাব দেখা দেয়। গরমে অনেক সময় খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওই খাবার খেলে বদহজমসহ পেটের নানা পীড়া দেখা দিতে পারে।
গরমে এসব সমস্যা থেকে বেঁচে থাকার জন্য যা করতে হবে তা হল- *যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। * বাইরে বের হলে সরাসরি রোদ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। পরনের কাপড় হতে হবে হালকা, ঢিলেঢালা, সুতির কাপড়; শরীর যথাসম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। * শরীরের উন্মুক্ত স্থানে সম্ভব হলে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে হবে, যা রোদে পোড়া থেকে সুরক্ষা দেবে। * প্রচরু পানি ও অন্যান্য তরল পানীয় পান করতে হবে। যেহেতু ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়, সেহেতু লবণযুক্ত পানীয় যেমন- খাবার স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদিও বেশি করে পান করতে হবে। অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে। চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত। * প্রয়োজনমতো গোসল করতে হবে এবং শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে হবে।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট, বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম স্বর্ণপদক) প্রাপ্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।