Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজ ঐতিহাসিক পলাশী দিবস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০২০, ১২:০২ এএম

আজ ২৩ জুন, ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। উপমহাদেশের মানুষের জন্য ট্রাজেডির দিন। ২৬৩ বছর আগে ১৭৫৭ সালের এ দিনে পলাশীর আম বাগানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে এক যুদ্ধে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লার পরাজয় ঘটে। অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। মীর জাফর আলী খান গংদের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লার বেদনাদায়ক মৃত্যু হলেও উপমহাদেশের মানুষ এখনো দিনটিতে তাকে স্মরণ করে।

ইতিহাসবিদরা লিখেছেন, নবাবের সেনাবাহিনীর তুলনায় ইংরেজদের সেনা সংখ্যা ছিল অনেক কম। মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা না করলে নবাবের বিজয় ছিল সুনিশ্চিত। নবাব সিরাজের সঙ্গে সেদিন যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন পরবর্তীতে তাদের কারোই স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।

প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন দিবসটি নানাভাবে পালন করে থাকে। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো দলের কর্মসূচির খবর জানা যায়নি।

ইতিহাসে দেখা যায়, ১৭১৯ সালে মুর্শিদকুলী খাঁ বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন। তার মৃত্যুর পর ওই বছরই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসনে বসেন সুজাউদ্দিন খাঁ। অতঃপর আলীবর্দী খাঁ ক্ষমতায় বসেন। ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল ২২ বছর বয়সে সিরাজউদ্দৌলা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সিংহাসনে আসীন হন। তরুণ নবাবের সাথে ইংরেজদের বিভিন্ন কারণে দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়। এছাড়া ক্ষমতার দাবিদার ছিলেন নবাবের খালা ঘষেটি বেগম ও সেনাপতি মীর জাফর। তারাই ইংরেজদের সাথে নীলনকশা করে নবাবের পতন ঘটান। নবাব সিরাজের স্ত্রী-কন্যাকে ঢাকার জিঞ্জিরা কারাগারে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছিল।

ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ প্রথম ষড়যন্ত্রের জাল বোনেন রাজদরবারের অভিজাত সদস্য উমিচাঁদকে ‘এজেন্ট› নিযুক্ত করে। নেপথ্য নায়ক মীর জাফর তা আঁচ করতে পেরে নবাব তাকে প্রধান সেনাপতির পদ থেকে অপসারণের উদ্যোগ নেন। ক‚টচালে পারদর্শী মীর জাফর পবিত্র কুরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ করায় নবাবের মন গলে যায় এবং মীর জাফরকে প্রধান সেনাপতি পদে পুনর্বহাল করেন।

ইতিহাসবিদরা লিখেছেন, ইংরেজদের পূর্ণিয়ার শওকত জঙ্গকে সাহায্য করা, মীরজাফরের সিংহাসন লাভের বাসনা ও ইংরেজদের পুতুল নবাব বানানোর পরিকল্পনা, ঘষেটি বেগমের সাথে ইংরেজদের যোগাযোগ, ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ সংস্কার, কৃষ্ণ বল্লভকে কোর্ট উইলিয়ামে আশ্রয় দেয়া ইত্যাদির জন্যই ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে সকাল সাড়ে ১০টায় ইংরেজ ও নবাবের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মীর মদন ও মোহন লালের বীরত্ব সত্তে¡ও জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ, উর্মিচাঁদ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ কুচক্রী প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারীদের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয় ঘটে। সেই সাথে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য পৌঁনে দু’শ বছরের জন্য অস্তমিত হয়।

মীর জাফরের মোনাফেকিতে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে উপমহাদেশের মানুষের কাছে ‘মীরজাফর’ বিশ্বাসঘাতক-মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হয়। অবশ্য ইংরেজরা দেশ শাসনের নামে ১৯০ বছর জুলুম নির্যাতনের পর উপমহাদেশের মানুষের আন্দোলনের মুখেই ১৯৪৭ সালের মাঝামাঝি সময় পাকিস্তান ও ভারত দু’টি দেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যায়।



 

Show all comments
  • মশিউর ইসলাম ২৩ জুন, ২০২০, ১:৫৩ এএম says : 0
    আজ ২৩ জুন, পলাশী দিবস। প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার কোনো খবর নাই, সবাই মেতে আছে ক্ষমতাসীন দলের জন্মদিন নিয়ে। সবাই কেমন করে ভুলে গেলো এই ঐতিহাসিক ঘটনার কথা..??
    Total Reply(0) Reply
  • অনিক আহসান ২৩ জুন, ২০২০, ১:৫৪ এএম says : 0
    ১৭৫৭ র মির্জাফর, জগত শেঠ রা ২০২০ তে এখন আরো অনেক শক্তিশালী। তবে এক্টাই ভরসা জনগণও ১৮ কোটি। এর একটা বড় অংশ রুখে দাড়ালেই অনেক কিছু সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ২৩ জুন, ২০২০, ১:৫৪ এএম says : 0
    আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা যুদ্ধ করেছিলেন শ্রেফ একটা পক্ষের বিরুদ্ধে না, একটা কাল, একটা অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়াই বাঙলায় একিসাথে ঔপনিবেশিক এবং পুজিবাদী যুগের সুচনা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ২৩ জুন, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
    আসেন পলাশী দিবসে আমরা আজ পলাশী থেকে শিক্ষা নেই
    Total Reply(0) Reply
  • সজল মোল্লা ২৩ জুন, ২০২০, ১:৫৬ এএম says : 0
    ভাবতেও খারাপ লাগে যে, সমস্ত বাংলাদেশ আজ মীর জাফরে পরিনত হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৩ জুন, ২০২০, ৪:৫৪ এএম says : 0
    বুজে আর না বুজে বলতেই থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Habiba khanam ২৩ জুন, ২০২০, ৮:৩৪ এএম says : 0
    Mirjafarder joy hobe na,Desher janagon ekdin roke darabeShorbopori Allah malik
    Total Reply(0) Reply
  • Md rahim ২৪ জুন, ২০২০, ১১:৩০ পিএম says : 0
    Sad
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ