হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর
বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ ছিলেন মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। তার মৃত্যু গোটা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। তার জন্মস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত নাড়া দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তার জানাজায় তাকে শেষ সম্মান জানানোর জন্য সমবেত হয়েছে। মুষ্টিযুদ্ধ বা ক্রীড়াঙ্গন থেকে অনেক আগে তিনি বিদায় নিলেও তার কীর্তির জন্যই তিনি বিশ্ববাসীর সম্মান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময়ের অবস্থা এমন ছিল যে, একদিকে জিয়াউর রহমান যেমনি জনপ্রিয় ছিলেন তেমনি জনপ্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ আলী। দুজনই আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। ঘাতকের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে প্রেসিডেন্ট জিয়ার। আর রোগে আক্রান্ত হয়ে বয়সের ভারে মারা গেছেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৭৮ সালে পাঁচ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী। মোহাম্মদ আলী কেবলমাত্র একজন মুষ্টিযোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি অভিনেতা, গায়ক, লেখক, কবি, বক্তা, শান্তিবাদী নেতা ও গরিবের বন্ধু ছিলেন। এত কিছুর পরও তার মৃত্যুর পর কার্যত সবকিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা হলো তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ না নেয়া। ১৯৬৪ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তার নাম ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়র পরিবর্তন করে রেখেছিলেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৬৭ সালে মার্কিন নাগরিক হিসেবে তাকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বলা হলে তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন। এ কারণে তার হেভিওয়েট শিরোপা কেড়ে নেয়া হয়েছিল। বাতিল করা হয়েছিল মুষ্টিযুদ্ধের লাইসেন্স। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও কাপ্তাই গিয়েছিলেন। তাকে বাংলাদেশের সাম্মানিক নাগরিকত্ব এবং বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের যেখানেই তিনি গিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছে। সে সময়ে কক্সবাজারে তাকে শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ একখ- জমিও দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে তিনি তাদের চমৎকার এবং দেশটিকে স্বর্গ বলে অভিহিত করেছিলেন।
মোহাম্মদ আলী কেন বাংলাদেশকে ভালোবেসেছিলেন এবং কেন তিনি স্বর্গ বলে অভিহিত করেছিলেন তার কোনো বিশদ বিবরণ কোথাও না থাকলেও এটা পরিষ্কার যে, বোধ ও বিশ্বাস থেকেই এটা উৎসারিত হয়েছিল। মোহাম্মদ আলীর জীবনাচার এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনাচারের মধ্যে তাত্ত্বিক ও দার্শনিক মিল রয়েছে। ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়র ছিলেন মূলত একজন ‘কালো ক্রীতদাস’। অবশ্যই এখানে ক্রীতদাস প্রসঙ্গ উঠলে একটু বলে রাখা দরকার যে, ক্রীতদাসের বর্তমান যে ধারণা রয়েছে, তার সাথে প্রকৃত ইতিহাসের কোনো সম্পর্ক নেই। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এটাই সত্যি যে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে এমন এক শ্রেণীর জন্ম হতো যারা কার্যত ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি হতো। ইতিহাসে এমনকি ভারতবর্ষেও ক্রীতদাসদের শাসক হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। বর্তমান সময়ে যে ক্রীতদাসের আলোচনা তা কার্যত কোনো রাজ্যজয়ের ফল নয় বরং শিল্প বিপ্লব উত্তরকালে নিজেদের তথাকথিত আভিজাত্য সংরক্ষণে অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত অফ্রিকার স্বাধীন মানুষদের জোরপূর্বক ধরে বেঁধে এনে গলায় শিকল পরিয়ে তাদের ভাষায় ক্রীতদাস বানানো হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে একজন বিখ্যাত মনীষী যথার্থই মন্তব্য করেছেন যে, মুসলমানরা আফ্রিকার মানুষদের পোশাক পরিয়েছিল আর ইউরোপিয়ানরা তাদের দাসে পরিণত করেছে। সে সূত্র ধরে বলা যায়, রুটসের কিনতা কুনতে, মার্টিন লুথার কিং আর মোহাম্মদ আলী যা করেছেন তা মূলত একই সূত্রে গাঁথা। তবে পার্থক্য এটুকু যে মোহাম্মদ আলীর প্রতিবাদ অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় বহন করছে। এর কারণ তার ধর্ম বিশ্বাস। তিনি ওই সমাজের চরিত্র চিত্রণ করে এবং তার ওপর করা বৈষম্য নিরসন এবং তা থেকে মুক্তির পথ হিসেবেই প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এক বিবরণীতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আলী প্রায় দুই লাখ মার্কিনিকে মুসলমান বানিয়েছিলেন। এ জন্য যে তিনি নিন্দিত হওয়ার পরিবর্তে নন্দিত হয়েছেন, তার প্রমাণ এবারের নির্বাচনে তিনি জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। এখন শুধু তিনি নন বহু শ্বেতাঙ্গও সমাজের অবিচার নিরোধে এবং সামাজিক ভারসাম্য সৃষ্টির প্রবণতা থেকে ইসলামের পতাকাতলে শামিল হচ্ছেন। ইসলামের সাম্যবাদী ধারণাই মূলত মোহাম্মদ আলীদের আকৃষ্ট করেছে এবং বর্তমানে অন্যদের করছে। এখানেই বোধকরি তার দেশপ্রেমের ধারণা সম্পৃক্ত হয়ে আছে। বাংলাদেশের সাথে তার যে চেতনাগত সম্পর্ক তার সূত্রও মূলত ইসলাম। বর্ণবাদী সমাজের নিগড়ে বন্দী থেকে তিনি অনুভব করেছিলেন যে ওই সমাজে মানুষের নয় বরং মানুষের অবমাননাকর কিছু তথাকথিত নিয়মনীতিকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই তিনি বিদ্রোহ করেছিলেন ওই সমাজের বর্ণবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এটা ঘটেছিল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। শুরুটা হয়েছিল ষষ্ঠ শতকে তবে পরিণতি লাভ করেছিল আরো পরে। ভারতীয় সমাজে বর্ণবৈষম্যের শিকার সাধারণ মানুষ যে ধর্মীয় আস্থাহীনতার সংকটে নিপতিত হয়েছিল সেই সাথে সমাজের একজন হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণের যে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধান আসে ১২ শতকের শেষদিকে। এর আগে থেকেই সুফীদের দ্বারা এ অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু হয়েছিল। মোহাম্মদ আলীও সুফিবাদে আকৃষ্ট হয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ অঞ্চলে সামাজিকভাবে বঞ্চিত নিগৃহীত লাঞ্ছিত শ্রেণী তাদের সামাজিক স্বীকৃতি এবং ধর্মীয় আস্থার জায়গাটি খুঁজে পায় ইসলামে। সে কারণেই তারা ইসলাম গ্রহণ করে এবং সমাজে নতুন পরিচিতি লাভ করে। এই যে বর্ণবাদ ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী ঐক্য এটার সাথেই মোহাম্মদ আলীর চেতনাগত আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। সে কারণেই তিনি এ দেশে এসে নিজেকে এদেশের জনগণেরই অংশ বলে মনে করেছেন। অথচ আজকের বাংলাদেশে যে কেউ এলে ফিরে গিয়ে কি তিনি এ দেশের সম্পর্কে ভালো কোনো ধারণা ব্যক্ত করবেন? অবশ্যই নয়। স্বর্গ বলা দূরে থাক তিনি স্পষ্টতই নরক বলে অভিহিত করবেন। গত কিছু দিনে সেটাই দেখা যাচ্ছে। এই পার্থক্য ঠিক কী কারণে সেটা অনুভব করা গেলেই বাংলাদেশে চলমান আস্থার সংকট খানিকটা হলেও কাটিয়ে ওঠা অনেকখানি সহজতর হয়ে উঠতে পারে। যে বর্ণবাদী বৈষম্যের আলোচনা চলছে ভিন্নভাবে হলেও সেই বর্ণবাদী নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন ভারতের সংবিধানের প্রধান নির্মাতা ভীমরাও রামজী আম্বেদকর। একজন উচ্চমানের ব্যবহার শাস্ত্রবিদ, রাজনৈতিক নেতা, বৌদ্ধ আন্দোলনকারী, দার্শনিক চিন্তাবিদ, নৃতত্ত্ব¡বিদ, ঐতিহাসিক, বাগ্মী বিশিষ্ট লেখক, অর্থনীতিবিদ, প-িত, সম্পাদক, রাষ্ট্রবিল্পবী এই মনীষীকে বলা হয় বৌদ্ধ পুনর্জাগরণবাদী। সব বাধা অতিক্রম করে স্বীয় প্রতিভাবলে পাশ্চাত্য শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করা সত্ত্বেও তিনি মূলত ভারতীয় অস্পৃশ্যবাদের শিকার ছিলেন। সে কারণেই তিনি ভারতীয় সমাজের সাধারণের সামাজিক অধিকার ও সামাজিক স্বাধীনতার জন্য কলম ধরেছিলেন এবং সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেছেন, ‘নো পিওন, মনো ওয়াটার।’ অর্থাৎ আম্বেদকার অস্পৃশ্য বালকদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে গেলে তাদের আলাদা করে দেয়া হতো। শিক্ষকরা তাদের প্রতি মনোযোগ দিতেন না। শ্রেণী কক্ষের ভেতরেও বসার অনুমতি ছিল না। পিপাসা পেলে উচ্চশ্রেণীর কেউ একজন স্পর্শ বাঁচিয়ে ওপর থেকে পানি ঢেলে দিত, তাদের জগ ধরার অনুমতি ছিল না। এ কাজটি সাধারণত করত বিদ্যালয়ের পিওন। সে না থাকলে সারাদিন পানি ছাড়াই কাটাতে হতো। ১৯৫৬ সালে আম্বেদকার নাগপুরে তার অনুসারীদের নিয়ে এক গণঅনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছ থেকে ত্রিশরণ ও পঞ্চশীল গ্রহণের মাধ্যমে সস্ত্রীক ধর্মান্তকরণ সমাপ্ত করেন। তারপর তিনি তার প্রায় ৫ লাখের মতো সহযোগীর সবাইকে ধর্মান্তর সম্পন্ন করেছিলেন। আম্বেদকার যে মুক্তির খোঁজ করেছিলেন আজো ভারতে তা সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না বরং পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে। সেখানে মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মবলম্বীদের ওপর চলছে নির্বিচার গণনির্যাতন। এসবের মূল কারণ যে বিশ্বাসগত দুর্বলতা তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে অবশ্যই ধর্মান্তকরণের বিষয়টির একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ব্রিটিশ ভারতে শাসকদের আনুকূল্য লাভের জন্য এক ধরনের ধর্মান্তকরণ হতো। এখনো ভিন্নমত লালনের বিবেচনায় আশ্রয় দেয়ার নামে ধর্মান্তকরণ চলছে। এসব আর আলোচ্য ক্ষেত্র এক নয়। ভারতেও মুসলমানরা যখন শাসন করেছেন তখন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কোনো ধর্মান্তকরণ হয়নি। ধর্মান্তকরণের সাথে প্রকৃত সম্পর্ক রয়েছে মনের। বিশ্বাসের সাথে আত্মিক যে সম্পর্ক রয়েছে সেখানেই ধর্মান্তকরণের মূলসুর নিহিত। সারা বিশ্বে বর্তমানে যে ইসলামের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে তার কারণ ইসলামের সাম্যবাদী ধারণা ও ইনসাফ।
যারা একাত্ববাদে বিশ্বাসী তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোথাও মাথা নোয়াতে শেখে না। ভারতবর্ষের শেষ মোঘল স¤্রাট বাহাদুর শাহ জাফর, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরজ-উদ-দৌলা, টিপু সুলতান থেকে শুরু করে সাদ্দাম হোসেন, মুয়াম্মার গাদ্দাফি সবার বেলায়ই এ কথা প্রযোজ্য যে, তারা জেনে-বুঝেই শাহাদাতের পেয়ালা গ্রহণ করেছেন। সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী পবিত্র কোরআনুল কারিমের হুকুমের আহ্বান জানাতে গিয়ে বর্তমান বিশ্বে কম মুসলমান হয় ফাঁসিতে নয়তো টার্গেটেট হত্যাকা-ের শিকারে পরিণত হয়নি। তাই বলে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সহায়তা চেয়েছে অন্য কারো কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তা বোধহয় কোনো বিবেচনাতেই বলা যাবে না। এরা কারো কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছে সেরকম নজিরও দেয়াভার। এটি একাত্ববাদের শিক্ষা। বাংলাদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। দেশের নাগরিকরা আক্রান্ত। যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন মানুষের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই একই পরিস্থিতি। ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরে চলমান বাস্তবতা ক্রমেই বিপজ্জনক পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে। দেশের এবং বিদেশের সব মহলই পরিস্থিতি নিরসনে কার্যকর ফলপ্রসূ নির্বাচন ও অর্থবহ সংলাপের পক্ষে কথা বললেও বাস্তবে তার কোনো লক্ষণ নেই। এ অবস্থার জন্য যেখানে ভারতের সে সময়ের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দায়ী তাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তথা পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য ভারতীয় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান না জানিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর বর্তমান হামলা ও হত্যাকা-ের প্রেক্ষিতে শঙ্কা প্রকাশ করে এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। তারা চাইছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকার যেন বিষয়টি ঢাকার কাছে তুলে ধরে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সংগঠনটির ইউনিট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার কর্মী রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হলো হিন্দুরা। এ সম্প্রদায়টি বাংলাদেশে ঝুঁকির মুখে। তার মতে, মৌলবাদী ও জামাতিরা বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের মূলোৎপাটনের চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ভারত এক্ষেত্রে কিছু করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আমাদের বড় আশা রয়েছে। তার উচিত এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের স্বনামধন্য অভিনেতা এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যতক্ষণ না ভারত বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে মৌলবাদীরা থামবে না। তিনি আরো বলেছেন, ভারত এ অঞ্চলে একটি প্রধান শক্তি। একটি প্রতিবেশী দেশে যখন হিন্দুদের নির্মমভাবে জবাই করা হচ্ছে, তখন সে অলস বসে থাকতে পারে না। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত এ খবর নিয়ে বিবিসির কাছে কিছুটা ভিন্ন সূরে কথা বলেছেন আলোচ্য সংগঠনটির নেতা। বিবিসির পক্ষ থেকে অন্য যেসব হিন্দুর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে তাদের বক্তব্য আলোচ্য নেতার বক্তব্যের সাথে অভিন্ন। এ নিয়ে পানি আরো গড়িয়েছে। ভারতীয়রাও কথা বলেছেন। তারা অবশ্য নানা বিবেচনায় দেখতে চেষ্টা করেছেন। কথা যাই হোক ভারতীয় রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা যে সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে সে ব্যাপারে তারা অনড়। বোঝা যায় বক্তব্যে কোনো গরমিল নেই।
বাংলাদেশ ঐতিহাসিক কাল থেকেই একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। জগন্নাথ হলে ছাদ ধসে পড়লে সেখানকার আহত শিক্ষার্থীদের রক্ত দিতে প্রথমেই ছুটে গিয়েছিল আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ভারতবর্ষ যখন মুসলমানরা শত শত বছর শাসন করেছে, তখনও ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়নি। প্রকৃতপক্ষে কোনো মুসলমান সাম্প্রদায়িকতাতে বিশ্বাসী নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যা ঘটছে তার নানামাত্রিক আলোচনা রয়েছে। কেন এবং কী কারণে এসব ঘটছে তার সূত্র-উৎস অনুসন্ধানে দেশের সকল মহলই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। মিডিয়াসহ বিশিষ্ট নাগরিকগণও এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সব কিছু সত্ত্বেও এ ধরনের হত্যাকা- বন্ধে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পেরেছে, তার কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ যখন পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না, তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না, ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশ মরুময় হয়ে যচ্ছে এমনকি ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে গ্যাস প্রাপ্তির আশাও যখন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তখন কিন্তু বাংলাদেশের জীবন মরণ সমস্যা সমাধানে এই সংগঠনটির আলোচ্য নেতা এসব সমস্যা সমাধানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেননি। তাহলে হঠাৎ নিরাপত্তার প্রশ্নটি আলাদা করে এলো কেন? এখানেই ধর্মীয় বোধ-বিশ্বাসের প্রশ্নটি বড় করে দেখা দেয়। কার্যত বহুত্ববাদীদের ধর্ম বিশ্বাস আর একাত্ববাদীদের ধর্ম বিশ্বাসে দেশপ্রেম ধারণায় বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। একজন একাত্ববাদী যখন আল্লাহর ওপর গভীর আস্থাশীল তখন বহুত্ববাদীরা নির্ভর করছে পার্থিব নানা শক্তির ওপর। বিশ্বাসের মূল প্রসঙ্গ এখানেই। ভারতসহ বিশ্বের যত জায়গায় মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে তারা তো কোনো পার্থিব শক্তির সহায়তা বা হস্তক্ষেপ কামনা করছে না। এখানেই মোহাম্মদ আলীর প্রকৃত শক্তি পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি যে অন্যায় যুদ্ধের বিরোধিতা করছিলেন তা সময়ে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃত বিবেচনা হচ্ছে মানুষের অধিকার। ইসলামে মানুষের যে অধিকার স্বীকৃত রয়েছে তার সমমাত্রার বা কাছাকাছিও অন্যরা অবস্থান করছে না। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, একজন কাফ্রী ক্রীতদাসও যদি আল্লাহর কোরআন ও রাসূলের সুন্নত মোতাবেক শাসন করে তাহলে তার শাসন মেনে নিও। বাস্তবত সামাজিক বৈষম্য নিরসনে ইসলামী সাম্যবাদী ধারণার কোনো বিকল্প নেই। পাশ্চাত্য বিশ্ব মানবাধিকার সংরক্ষণের নামে ভিন্নমতাবলম্বীদের আশ্রয় দেয়ার যে ব্যবস্থা রেখেছে তা মূলত ইসলাম বিরোধীদের জন্য। সে কারণেই সে সমাজে প্রকাশ্য সামাজিক অধিকারের কথা বলা হলেও তা যে কতটা মিথ্যাচার তা ফুটে উঠেছে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো প্রার্থীর বক্তব্যে। এ থেকে নিস্তার পাননি মোহাম্মদ আলীও। মৃত্যুর পরেও তিনি সমভাবে উঠে এসেছেন তার সমাজে অন্তত যে সমাজে তিনি জন্মেছিলেন। এখানে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার, অমুসলিম প্রধান ভারতের পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আল্লাহর নামে শপথের মধ্য দিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বকে। বাংলাদেশের আলোচ্য নেতা হয়তো সে কথাটি ঠিকমতো অনুভব করতে পারেনি। এটাও এখানে বলা দরকার, মমতা যেখানে আল্লাহকে স্মরণ করছেন আমরা সেখানে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়েছি। সে কারণেই এটা বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না, একটি সাম্যভিত্তিক সমাজ গঠনে ইসলামী মূল্যবোধের কোনো বিকল্প নেই।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।