Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভবদহে ১০ কপাট পলির নিচে

ভয়াবহ পানিবদ্ধতার শঙ্কায় এলাকাবাসী

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

যশোর-খুলনার ৪টি উপজেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষের ভোগান্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে ভবদহ এলাকার ২১ ভেল্ট সুইচ গেট। গেটের ২১ কপাটের মধ্যে ১০টি কপাট পলির নিচে অকেজো হয়ে পড়ছে। ফলে পানি চলা চলের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সুইচ গেটের কপাট সংস্কার ও টিআরএম চালু না করা হলে ভয়াবহ পানি বন্দী হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর-খুলনার ৪টি উপজেলা অভয়নগর, কেশবপুর, মনিরামপুর ও ডুমুরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত দুঃখ দুর্দশার অপর নাম ভবদাহ। এখানে বয়ে যাওয়া তিনটি নদী মুক্তেশ্বরী, শ্রীহরি ও টেকা নদীর মোহনা। এই মোহনার সবচেয়ে বড় ২১ ভেল্ট সুইচ গেটের দু’পাশে ১০টি কপাট নদীর পলির নিচে পড়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভবদহে শ্রীহরি, টেকা ও মুক্তেশ্বরী এ তিনটি নদীতে পলি জমে নাব্যতা হারিয়েছে। জোয়ারের সময় ২-৩ ফুট পানি হলেও ভাটির সময় নদীগুলো শুকিয়ে যায়।
এলাকাবাসীরা জানান, পলি জমে নদীর নব্যতা হারানোর ফলে প্রতিবছর ব্যাপক এলাকা পানি বন্দী সৃষ্টি হয়। জোয়ারাধার চলাকালিন নদী নাব্যতা ফিরে পায়। জোয়ারাধার বন্ধ করলে পলি জমে নদী আবার তা ভরাট হয়ে যায়। এ অবস্থার উত্তোরণের জন্য এলাকাবাসী জোয়ারাধার চালু রাখার দাবি করে আসছেন। অপরদিকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নদী খনন করে যে সামান্য নাব্যতা ফিরে পায় তা ম্লান হচ্ছে অপরিকল্পিত মৎস্য খামারের কারনে। শ্রীহরি নদীর উজানে ও ভাটিতে একাধিক স্থানে নদীর জমি দখল করে স্থাপনা ও মৎস্য খামার গড়ে ওঠেছে। এক বিল থেকে অন্য বিলে পানি নিস্কাশনের যে সমস্থ খাল রয়েছে তার অধিকাংশ দখল করে মাছের খামর গড়ে উঠেছে। উঁচু বিল থেকে নিচু বিলে পানি প্রবহের যে সব দাড়া রয়েছে তা দখল হয়ে গেছে।
ফলে একটু বৃষ্টি হলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। স্থায়ী জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প চালু করা। সূত্র মতে, ১৯৬০ সালে ভবদহ অঞ্চলে যশোর জেলার মনিরমাপুর উপজেলার আড়পাতা, বিল কপালিয়া, অভয়নগর উপজেলার দামুখালি, ভবানিপুর, দত্তগাতি, বারান্দি, চুমড়ডাঙ্গা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেঙ্গা, চেঁচুড়ি, বরুণাসহ ২৭ বিলের পানি নিস্কাশনে এই সুইস গেট নির্মাণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে ২৭ বিলের বৃষ্টির পানি ভবদহ সুইস গেট দিয়ে নিস্কাশিত হয়। ১৯৮৬ সালে সুইস গেটে পলি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভবদহ অঞ্চলের বিলপাড়ের কুলটিয়া, মশিয়াহাটি, মহিষদিয়া, পোড়াডাঙ্গা, সুজাতপুর, ডুমুরতলা, হাটগাছা, সুন্দলীসহ কয়েক শ’ গ্রামের লাক্ষাধিক মানুষের মরনফাঁদে পরিনত হয়। পরবর্তিতে জলাবদ্ধ থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য ১৯৯৪ সালে পানিবন্দি শত শত গ্রামের মানুষ আন্দলোন শুরু করে।
ওই সময় এডিবি আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ভবদহের পানি নিস্কাশন প্রকল্প (কেজিডিআরপি) গ্রহন করা হয়। প্রকল্পের ব্যায় নির্ধারন করা হয় ২৫৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও জলবদ্ধতার নিরসনের কোন সমাধান হয় নেই। এরপর ২০০৭ সালে ৫৯ কোটি ৫৯লাখ টাকা, ২০১০ সালে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট এলাকার জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ব্যয় করা হয়। প্রকল্পের অর্থের বড় অংশই লুটপাটের অভিযোগ তুলেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় টিআরএমসহ ছোট ছোট প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও পানিবন্দি মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় নেই।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান, নদীর পানির সাথে প্রচুর পরিমানে পলি আসে, মনে হচ্ছে পানি আর নেই সবই পলি মাটি। নদীর পলি মাটিতে পনির স্রোত চলাচল না করতে পারায় নদীও যেমন ভরাট হয়ে যাচ্ছে তেমনি সুইচ গেটের কপাটে পলি জমে অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এ আবস্থায় যদি টিআরএম চালু না করা হয় তহলে এ মৌসুমে একটু ভারি বৃষ্টি হলে ভবদহের সংশ্লিষ্ট যশোর খুলনার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে এখন থেকেই টিআরএম চালু করতে হবে, টিএরএম বাদে অন্য কোন প্রকল্পে এর সমাধান হবেনা। তিনি আরও বলেন, অজ্ঞত কারনে ভবদহ এলাকায় টিআরএম বা জোয়ারাধার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের কাছে টিআরএম প্রকল্পের জোর দাবি জানান।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্মামী বলেন, পলির কারনে সুইচ গেটের কপাট নষ্ট হচ্ছে না। নদীর পানিতে প্রচুর পরিমানে পলি আসে, নিয়মিতভাবে পরিস্কার করছি পুনরায় এসে ভরে যাচ্ছে। আমাদের খনন কাজ চলমান আছে, দু’টি ভাসমান স্কোভেটর যার ভাড়া প্রতিদিন সাড়ে ১৬ হাজার টাকা। মাত্র ১০-১২ দিন আগে আমরা কাজ করে পরিস্কার করে দিয়ে এসেছি। এ বছর বৃষ্টিপতি একবারে কম, মাত্র ৩শ’ ১০ মিলিটিার বৃষ্টি হয়েছে জুলাই মাসে। সাধারণত বৃষ্টিপাত বেশী হলে নদীর পলি কমে যায়। তবে আমি জানতে পেরেছি নদীর পানি প্রচুর পরিমানে পলি আসায় গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুনরায় স্কোভেটার দু’টি পাটিয়ে দিয়ে পলি পরিস্কার করে দিব। তবে সরকারের দিক নির্দেশরা অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবদহ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ