পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে শুক্রবার এলেই সবাই ছুটেন পাঠশালার দিকে। ৩০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারীদের চোখে মুখে এখন নিরক্ষরমুক্ত হওয়ার আলোকরশ্মি। সবার হাতে বর্ণমালা শেখার বই। সাথে খাতা-পেন্সিল, শ্লেট-চকপেন্সিল।
টিনসেডের একটি দালান ঘরের সামনের কক্ষেই চেয়ার টেবিলে বসে কেউ বর্ণমালার অক্ষর পড়ছেন। কেউ কেউ শ্লেটে চকপেন্সিল দিয়ে লিখছেন। আবার ফাঁকে ফাঁকে ফরমিক বোর্ডে মোছনীয় কলমে লিখে শিক্ষক বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সবাই বোর্ডের দিকে মনোযোগ দিয়ে দেখে দেখে লেখার চেষ্টাও করছেন। ছোটদের বর্ণমালার বই ঘিরে এভাবেই অক্ষরজ্ঞান নিচ্ছেন বয়োজ্যেষ্ঠরা।
প্রতি মাসের দ্বিতীয় এবং শেষ শুক্রবার বিকেলে অক্ষরজ্ঞানহীন বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরা একত্রিত হন কুমিল্লা শহরতলীর শুভপুর এলাকার কিন্ডার গার্টেন শিক্ষক রোটারিয়ান ফারুকুল ইসলামের পাঠশালায়। উদ্দেশ্য প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করা। রোটারী ক্লাব অব লালমাই এর উদ্যোগে কুমিল্লা শহরতলীর শুভপুর গ্রামে টানা চার বছর ধরে চলছে বিনামূল্যে শিক্ষাদানের কর্মসূচি। শিক্ষক ফারুকুল ইসলাম তার ঘরেই ১২ জন বয়স্ক নারীদের অক্ষরজ্ঞান দিচ্ছেন।
একসময় শহরতলীর শুভপুর-চানপুরের এই নারীদের কাছে লেখাপড়া শব্দটা অনেকটা অলীক কল্পনার মতো মনে হতো। কিন্তু রোটারী ক্লাব অব লালমাইয়ের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম সেই অলীক কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। বয়োজ্যেষ্ঠদের ওই পাঠশালায় গিয়ে কথা হয় প্রাথমিক শিক্ষা নিতে আসা ছেনুয়ারা বেগম, রফিয়া বেগম, লাইলি আক্তার, জেসমিন আক্তার, আমেনা বেগম, শারমিন আক্তার ও রাশেদা বেগমের সাথে।
তারা জানান, আমরা লিখতে পড়তে পারতাম না। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠালেও নিজেরা ছিলাম লেখাপড়ায় অজ্ঞ। টিপসই ছাড়া আর কিছুই জানতাম না। ফারুক স্যারের ঘরে (পাঠশালায়) এসে বানান করে পড়তেও পারি। যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ করতে পারি। আগে টিপসই দিতাম। এখন নাম লিখতে পারি। স্বাক্ষর দিতে শিখেছি। প্রথম প্রথম শরম (লজ্জা) পেতাম। এখন লেখাপড়া করতে আনন্দ লাগে। বাংলা লিখতে পড়তে সমস্যা হয় না। আমরা এখন শিখেছি অ-তে অজগর, আ-তে আম। অংক, ইংরেজিও শিখছি। ক্লাবের লোকজন এসে আমাদের খোঁজ-খবর নেয়। বিনে পয়সায় বই, খাতা, কলম, পেন্সিল ও শ্লেট দিচ্ছে।
কয়েকদিন আগে রোটারী ক্লাবের ডিস্ট্রিক গভর্ণর, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও নারী নেত্রী দিলনাশিঁ মোহসেন শুভপুর গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের এ পাঠশালা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি এসব নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো শিক্ষা। আর একজন মা অন্তত অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হতে পারলে সমাজে শিক্ষা ও সচেতনতাবোধ সৃষ্টি হবে। যার প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছুঁয়ে যাবে। একেকটি পরিবার নিরক্ষরমুক্ত হওয়া মানেই একেকটি গ্রামে শিক্ষার আলো জ্বলে ওঠা।
রোটারী ক্লাব অব লালমাই এর জোনাল কো-অর্ডিনেটর লুৎফুল বারী চৌধুরী জানান, গ্রামের অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষের পাশে থেকে শিক্ষা ও সচেতনতাবোধ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের এ কর্মসূচি। স্বাক্ষর না জানার কারণে সংগ্রামী জীবনের চাহিদা মেটাতে প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় একজন মানুষকে। আমরা এ অবস্থা মানুষগুলোকে অক্ষরের আলোর দুয়ারে আনতে গত চার বছর ধরে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছি। এপর্যন্ত প্রায় ৪ শতাধিক নারী নিরক্ষরতার অপবাদ মুছে স্বাক্ষরজ্ঞান অর্জন করেছেন।
বয়স্ক শিক্ষার পাঠশালার শিক্ষক রোটারিয়ান ফারুকুল ইসলাম বলেন, রোটারী ক্লাব অব লালমাই এর পক্ষ থেকে সামাজিক ও শিক্ষামূলক কাজে অবদান রাখার লক্ষ্যেই বিনা পারিশ্রমিকে এ কাজ করছি। আমাদের এ শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষগুলো এখন শিখছেন কিভাবে নিজের পরিচয় দিতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।