Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সউদী যুবরাজের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সাফল্য

পাকিস্তান, ভারত ও চীন সফর

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চলতি সপ্তাহান্তে সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের এশিয়ার তিন দেশ সফর ছিল একটি অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সাফল্য। বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত প্রকাশ করেছেন।
আরব নিউজকে সউদী আমেরিকান পাবলিক রিলেশন অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সালমান আল-আনসারি বলেন, অনেকে মনে করতে পারে, সউদী আরব প্রাচ্যের দিকে সরে যাচ্ছে। তবে আসল বিষয় হলো, দেশটি পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যে তার শাখা বিস্তার করছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বহুমুখিতার জন্য প্রয়োজন কৌশলগত বহুমুখিতা। সউদী আরব তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্রদের সাথে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে শীতলতা প্রদর্শন করেছে, তা আগে দেখা যায়নি। যোশফ প্যারি বিষয়টি বলেছেন এভাবে, ‘নতুন বন্ধু বানাও, তবে পুরনোদেরও ধরে রাখো; নতুনরা হলো রুপা, পুরনোরো স্বর্ণ।’
সফরটি হয়েছে ক্রাউন প্রিন্সের ভিশন ২০৩০-এর আলোকে। এই ভিশনে সউদী আরবের অর্থনীতিকে অপরিশোধিত তেলের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কাটিয়ে একটি প্রাণবন্ত, বহুমুখী অর্থনীতিতে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে। ক্রাউন প্রিন্সের পাকিস্তান, ভারত ও চীন সফরে এসব দেশের শীর্ষ নেতারা তাকে উষ্ণভাবে বরণ করে নিয়েছেন। সফরকালে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থনৈতিক চুক্তির পাশাপাশি নিরাপত্তা বাড়ানো ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আল-আনসারি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার, বিশেষ করে আদর্শগত ফ্রন্টে, বৈশ্বিক প্রয়াসে সউদী আরবই একমাত্র দেশ, যে নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ হামদান আল-শেহরি বলেন, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার অভিন্ন লক্ষ্যে চীন ও সউদী আর একই স্থানে অবস্থান করছে। সউদী আরবের উদ্বেগে ইতিবাচক সাড়া দেয় চীন। চীন জানে, আমাদের মহাদেশটি সন্ত্রাসবাদে কিভাবে ভুগেছে।
তিনি বলেন, দুই দেশ পারস্পরিক কল্যাণে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করেছে। চীনের দরকার বিপুল জ্বালানি সম্পদ। আর সউদী আরব এই জ্বালানি সরবরাহ করতে পারে চীনকে।
দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া চুক্তিগুলোর একটি হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ডলারের শোধনাগার ও পেট্রোক্যামিক্যাল কমপ্লেক্স নির্মাণ। চীনা নগরী পানজিনে এটি নির্মাণ করা হবে।
আর পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরে ১০ বিলিয়ন ডলারের তেল শোধনাগারের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে বিপুল। চীনের উচ্চাভিলাষী ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগ প্রকল্পের অংশবিশেষ এই গোয়াদার বন্দর। এখানে বিনিয়াগ পাকিস্তানের উপকার হওয়ার পাশাপাশি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের জন্যও কল্যাণকর হবে।
পাকিস্তানের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও সউদী আরব ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাতেও যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। দুই দেশ সন্ত্রাসপ্রতিরোধে একটি ওয়ার্কিং গ্রæপ প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে।
আল-শেহরি বলেন, ভারত মহাসাগর ও লোহিত সাগর পথে সউদী আরবের নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়ে ভারতও উদ্বিগ্ন। এগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্থান। আল-শেহরি উল্লেখ করেন, সউদী আরব এখন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার বিবাদ নিরসনে চেষ্টা করবে, যেভাবে করেছিল ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার বিরোধ নিরসনে।
বিষয়টি কেবল ব্যবসায়িক নয়। ক্রাউন প্রিন্সের সফরে আরো কিছু ঘোষণাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসবের মধ্যে ছিল সউদী কারাগার থেকে ২,১০০ পাকিস্তানি ও ৮৫০ জন ভারতীয়ের মুক্তি। আবার সউদী কারিকুলামে চীনা ভাষাও যুক্ত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর সেরা বলিউড পারফরমারদের নিয়ে কয়েকটি কনসার্টও আয়োজন করবে সউদী আরব। পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখাওয়া প্রদেশে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও দিয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স। এটি হবে ২০০৯ সালে জেদ্দায় বন্যার সময় ১৪ জনের প্রাণ বাঁচানোর কাজে এক পাকিস্তানির স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী যুবরাজের অর্থনৈতিক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ