Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সু চির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের সিদ্ধান্ত সঠিক নয় -সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার সারাজীবনের অর্জনকে কেড়ে নিতে চায়। এটা সঠিক হয়নি।’ বাংলাদেশে সফররত ভারতীয় একদল সাংবাদিকদের কাছে শনিবার দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাতকারে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচন, সরকার গঠন, তার দলের অর্জন ও বিরোধীদের অবস্থান তিস্তা চুক্তি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
সু চির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অং সান সুচি সর্বত্রই সমালোচিত ও নিন্দিত হচ্ছেন। এটা দুঃখ জনক। এটা ঠিক, তিনি আরও ভাল করতে পারতেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তিনি একাই কয়েক দশক ধরে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাদের গণতন্ত্র এখনও বিকাশমান। তাই তার একার জন্য সম্ভবত এ বিষয়ে কিছু করতে পারা কঠিন।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের জনগণকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছিল ভারত। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে সহায়তা করেছি আমরা। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা বিবাদ চাই না। তবে আমরা তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছি। তাদেরকে (রোহিঙ্গা) ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে তারা। কিন্তু আমি তাদেরকে এজন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে বলেছি। রোহিঙ্গারা চিরদিন আশ্রয়শিবিরে থাকতে পারে না। তারা অপব্যবহৃত হতে পারে। মিয়ানমারকে সমর্থন করছে ভারত ও চীন। কিন্তু আমরাও ভারতের একটু বেশি সাহায্য চাই।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের অর্জন বিষয়ে বলেন, ‘আমি আশা করি আবার সরকার গঠন করতে পারবো। আমরা কিছু ভাল কাজ করেছি। বেশ কিছু বড় প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পথে। আমি বিশ্বাস করি, আমি ক্ষমতায় ফিরলে তাতে বাংলাদেশের উত্থানে সুবিধা হবে। এখন আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা ৭.৮৬ ভাগ। তবে আমরা মুদ্রাস্ফীতি শতকরা ৫ ভাগের সামান্য বেশিতে ধরে রাখতে সফল হয়েছি। এটা একটা অর্জন। তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প আছে, যা আমরা সম্পন্ন করতে চাই। এ জন্য বিশ্বব্যাংক আমাদেরকে ঋণ বাতিল করে দেয়ার পর এ প্রকল্প নিজেরাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হলে তা থেকে জাতীয় প্রবৃদ্ধি শমকরা ১.২ ভাগ যোগ হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী ও দেশের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে চাই আমরা ২০২১ সালে। ক্ষমতায় না ফিরলে আমি মনে করি, বাংলাদেশ সৌভাগ্যে হারাতে দেখবে।’
নির্বাচন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনকে আমি রাজনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখি। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি কথা বলেছি এবং তাদেরকে আস্থায় এনেছি। আমি আগেও বলেছি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকা উচিত। কিন্তু তারা আমার কথা শোনে নি। তারা ভেবেছিল, নির্বাচন থামিয়ে দিতে পারবে। গত নির্বাচনে তারা যা করেছে তা ছিল ভয়াবহ। তারা বোমা ছুঁড়েছে। ৩৯০০ টি গাড়ি পুড়িয়েছে। মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং তাদের সাহায্যে জিতেছি। এবারও আমরা প্রস্তুত আছি। তারা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। তারা আমাকে লিখেছিল যে, আমার সঙ্গে বসতে চায় না। আমি মেনে নিয়েছি।’
বিরোধীদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বিএনপির সঙ্গে যুক্ত আছে জামায়াতে ইসলামী। আমি বিশ্বাস করি না যে, মানুষ তাদের আদর্শকে গ্রহণ করবে। কিন্তু এটাই তাদের জোট। তারা মনোনয়ন নিলামে বিক্রি করেছে, যেন তারা জাতিকেই নিলামে তুলছে। এভাবেই তারা সব করতে চায়। আমাদের দিক থেকে, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’
সন্ত্রাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাÐ হতে দিতে পারিনা। কারণ, আমি জানি যদি আমরা এটি প্রশ্রয় দেই, আমাদের দেশও ভুগবে। আমি বিশ্বাস করি শান্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব না।’
সার্ক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক সহযোগিতাকে মূল্যায়ন করি আমরা। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা ক্ষমতায় থাকার সময়ে তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিরুদ্ধে কর্মকান্ড চালানোর চেষ্টা করেছে, সন্ত্রাসকে উস্কে দেয়ার জন্য। এখন পাকিস্তানের অবস্থা দেখেন আপনারা। এক দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরেক দেশের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
তিস্তা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের (ভারতে) গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এর মাধ্যমেই জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। সম্ভবত তিস্তা চুক্তি করতে না করার পেছনে তাদের (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) নিজস্ব কারণ রয়েছে। আমাদের ভূপ্রকৃতিই এমন। এখন আমরা নদীগুলো ড্রেজিং করার পরিকল্পনা নিয়েছি, যাতে বেশি পানি ধরে রাখা যায়। (ভারতের) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি পরামর্শ দিয়েছি যে, তাদেরও নদী খনন করা উচিত। আমাদের যৌথ নদী কমিশন যেহেতু কাজ করে যাচ্ছে, তাই অভিন্ন নদীগুলো আমরা যৌথভাবে ড্রেজিং করতে পারি। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:০০ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রী কওমি জননী শেখ হাসিনা ভারত বাংলাদেশর সম্পর্ক, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও নির্বাচন নিয়ে যেসব কথা বলেছেন সব সঠিক বলেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকথাই সঠিক বলবেন এটা ঠিক নয়, যেমন এখনে তিনি আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের ভুল ধরেছেন যেটা আমাদের মতে সঠিক নয়। নেত্রী হাসিনা এখানে যে কথাটা অং সান সু চিকে যে বিষয়ের উপর বিবেচনা করার কথা বলেছেন ঠিক সেইভাবে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা করেছিল বাঙলা ভাষী বা বাঙ্গালী জাতী ভেবে পাকিস্থানের সমর্থকদের প্রতি সদয় দেখিয়েছিল ’৭২ সালে যার খেসার আমরা দিচ্ছি। একারনেই আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই ’৭২ সালে আমাদের দেশ স্বাধীন হবার পর যেটা হবার প্রয়োজন ছিল সেটাই করার দরকার ছিল। কিন্তু না সেসময়ে ঠিক এই কায়দায় মানে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা আমাদের জন্যে ভুল হয়েছিল। আর সেই ভুলের কারনেই ’৭৫ এর জন্ম হয়েছিল আর তাই আমাদেরকে পুনরায় পাকিস্তানিদের খপ্পরে পড়তে হয়েছিল এবং আমরা স্বাধীনতার সাধ হারিয়েছিলাম। সেজন্যেই যার যেটা প্রাপ্য তাঁকে তখনই সেটাই দিয়ে দেয়া দরকার এখানে কোন সমঝতা নেই। কাজেই মিয়ানমারে অং সান সু চির উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই সঠিক বলে আমরা মনে করি। আল্লাহ্‌ আমদেরকে ইতিহাস পুনাঃবৃতি না করিয়ে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার ক্ষমতা দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Helal Masud ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৬ এএম says : 1
    তিনি সূচির চেয়ে কম কিসের, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি সূচিকে ছাড়িয়ে গেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Mahbubur Rahman ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৭ এএম says : 1
    অপেক্ষা করেন আন্তর্জাতিক মহল আপনার বিরুদ্ধেও একটি বেঠিক (!) সিদ্ধান্ত রেডি করতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jabed K Jilani ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৭ এএম says : 1
    একজন জালিমইতো আরেকজন জালিমের পক্ষ নিবে। এটাইতো স্বাভাবিক.....
    Total Reply(0) Reply
  • Omar Faruque ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৮ এএম says : 1
    সুচির পক্ষে কথা বলা মানেই গনতন্ত্র এবং বিশ্ব মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান। তার বক্তব্যে এটাই প্রমাণ হলো মানবিক কারনে নয় বরং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে রাজনৈতিকভাবে নিজের সমর্থন লাভের আশায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Nurul ALam ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৯ এএম says : 1
    নোবেল পাওয়ার আশায় সুচির সাথে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গাদেরকে তাড়িয়ে বাংলাদেশ স্থান দিয়েছে শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Tafazzal Ahammed ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৯ এএম says : 1
    তারা মেলায় গিয়ে হারিয়ে যাওয়া দুইবোন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Rahman ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 1
    আগামী তে নিজের পরিণতির কথা চিন্তা করে মনে হয় এই কথা বলছে। আপনারা কিছু মনে করিয়েন না।
    Total Reply(0) Reply
  • Jony Rahman ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 1
    Huh?? Really surprised
    Total Reply(0) Reply
  • Enamul Islam ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০১ এএম says : 1
    সুচিই দায়ী আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সুচিকে তার ভূমিকার জন্য তাকে দেওয়া সব সম্মাননা কেড়ে নিয়েছে , সূচি নিজেও তার দেশের সেনাবাহিনীর গণহত্যা অস্বীকার করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nafiur Rahman Sohan ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০২ এএম says : 0
    হাসিনা ইজ দা বেস্ট পলিটশিয়ান অফ দিস ইরা,,,সী ইস অসাম।
    Total Reply(1) Reply
    • Mohammed Shah Alam Khan ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:২৮ পিএম says : 4
      রাগ করে বললেও কথাটা সত্য বলেছেন এজন্যেই আপনাকে ধন্যবাদ।
  • নামমোঃ আমিনুল ইসলাম ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:৪৫ এএম says : 0
    আমরা সাদারন পাবলিক আমরা কোন দিকে জাবো
    Total Reply(1) Reply
    • Mohammed Shah Alam Khan ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:৩৭ পিএম says : 4
      @ নামমোঃ আমিনুল ইসলাম,কোন দিকে যাবেন??আপনি কি বাংলাদেশে আছেন??তাহলে, যেহেতু আমরা মুসলমান সেহেতু দেশের চার নীতিতে না পারেন অন্তত এই তিন নীতিতে থাকুন, বাংলা ভাষা, বাঙালী জাতী ও ধর্মনিরপেক্ষতা তাহলেই আপনার চলার পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ