Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষিপণ্যের রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্যের রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নানা সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে এ খাতের রফতানি। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ায় আলু রফতানি বন্ধ আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পান রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও উঠছে না। এছাড়া দিনদিন সবজি রফতানিও কমছে। রফতানিকারকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষিপণ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি, অ্যাক্রেডিটেশন ল্যাবরেটরি না থাকা, মানসম্মত বীজের অভাবসহ নানা কারণে কৃষিপণ্যের রফতানি সেভাবে বাড়ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জানান, বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) সদস্য রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যান্ট প্রটেকশন কনভেনশন (আইপিপিসি) সনদ অনুসমর্থনকারী দেশ। এজন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের জন্য ডবিøউটিও ও আইপিপিসি’র বিধি-বিধান মেনে চলা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে বরই বাদে সব শাক-সবজি ও ফলমূল রফতানির জন্য উন্মুক্ত।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত কৃষিপণ্য রফতানি হয় ৩৫২ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমান অর্থবছরে একই সময়ে হয়েছে ৪০৬ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে শাক-সবজি রফতানি একই সময়ে ৫০ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমে ৪৯ দশমিক ০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রফতানি শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আলু রফতানি হয়েছিল মাত্র ১৮ হাজার টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ১৪ হাজার ১৫৭ টন। কিন্তু আমাদের দেশে আলু উৎপাদন এক কোটি টন ছাড়িয়েছে। বেশিরভাগ সময়ে কৃষকরা আলুর ন্যায্যমূল্য পান না। আলু রফতানির বাড়ানো হলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন না।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে কাঁঠাল রফতানি হয়েছিল ৯৯২ দশমিক ৮২ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর রফতানির পরিমাণ কমবে। কিন্তু একটু চেষ্টা করলে কাঁঠাল রফতানি বাড়ানো যায়।
ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে কৃষিপণ্য রফতানির জন্য অ্যাক্রেডিটেশন ল্যাবরেটরি খুবই জরুরি। কিছু কোয়ারেন্টাইন টেস্ট আছে, সেগুলো আমাদের এখানে ঠিকভাবে হয় না। ল্যাব থাকলে কৃষিপণ্যের রফতানি আমরা এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে পারবো খুব সহজেই। এখন রফতানি ৫০০ মিলিয়নের ঘরও অতিক্রম করে না।
২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পান রফতানি বন্ধ আছে জানিয়ে মনজুরুল ইসলাম বলেন, পান রফতানির ক্ষেত্রে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত অন্তরায়। ইইউ’র রিকোয়্যারমেন্ট হচ্ছে, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে স্যালমোনেলামুক্ত পান সরবরাহ করা। আমরা কিছু স্থান সিলেক্ট করে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের (কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্মত পণ্য উৎপাদন) মাধ্যমে পান উৎপাদন করছি। আমরা তিনটি ল্যাবরেটরিতে পান পরীক্ষা করে স্যালমোনেলামুক্ত পান পেয়েছি।
‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, অ্যাক্রেডিয়েটেড ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে পণ্য দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে স্যালমোনেলা টেস্টের জন্য এখনও অ্যাক্রেডিটেশন ল্যাব সেভাবে হয়নি। তারপরও এ বিষয়ে আমরা সরকারকে ইইউ’র সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। অ্যাক্রেডিটেশন ল্যাব না থাকলেও আমরা মনে করি স্যালমোনেলামুক্ত পান আমরা দিতে পারবো।
বাংলাদেশ পটেটো এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ আব্দুল কাদের বলেন, আলু রফতানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে উপযোগী জাতের অভাব। সারা বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। আলু উৎপাদনে আমরা যদিও সপ্তম অবস্থানে আছি। এর উৎপাদন প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু রফতানি উপযোগী জাতের অভাব রয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগে গ্রানুলা জাতের আলু রফতানি হতো, এখন এ জাতের আলু বিভিন্ন দেশ আর নেয় না। কারণ অন্যান্য দেশ ভালো জাত দিচ্ছে। আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ