Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রাহক তুলে নিচ্ছে আমানত

ব্যাংকের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : ব্যাংকিং সেক্টরে গত কয়েক বছর ধরে অস্থিরতা চলছে। যা বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। খেলাপি ঋণ অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফারমার্স ব্যাংকসহ ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারার ব্যর্থতা, দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার নানা অভিযোগে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে ব্যাপক পরিবর্তন আমানতকারীদের আস্থায় চিড় ধরে। এতে ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের টাকা উত্তোলনে চাপ বাড়ছে। এদিকে গ্রাহক ব্যাংক থেকে আমানত প্রত্যাহার করে নেয়ায় ঋণ আমানতের অনুপাত (সিডিআর) বেড়ে গেছে। একদিকে আমানত কমায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে, অপর দিকে সিডিআর বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এতে উভয় সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। তবে ব্যাংকগুলো এখন আমানতের সুদের হার বাড়িয়ে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে। দুই থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত সুদ বাড়িয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। এর সঙ্গে থাকছে বিশেষ অফার! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকের আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে সরে ডাকঘর ও সঞ্চয় পত্রে বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। আমানতকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ফেরত পাবেন কি না? তা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন গ্রাহকরা। যদিও এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে। আমানতের সুদের হার বাড়িয়ে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করলে ঋণের সুদের হার বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ তদারকির অভাবে ব্যাংকিং খাত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এত দিন সরকারি ব্যাংকের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ থাকলেও এখন তা বেসরকারি ব্যাংকেও ছড়িয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিঝিলের এক শিল্পপতি ইনকিলাবকে জানান, গত রোববার মধুমতি ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে তার এক ব্যবসায়িক বন্ধু এক কোটি টাকার চেকের বিনিময়ে মাত্র ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। বাকি ৯০ লাখ টাকা ব্যাংকে পরে দেবে বলে জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ওই ব্যবসায়ী আরও জানান, ওই শাখায় তার ৫০ লাখ টাকার বেশি আমানত রয়েছে। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে ওই বন্ধু ব্যবসায়ীর মত তার পরিনিতি হলে, তখন চরম বিপদে পড়বেন। এ জন্য শিগগিরই ওই ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজম বলেন, মধুমতি ব্যাংকে এ ধরণের কোন সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই। এ রকম কোন অভিযোগও পাইনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের গ্রামীণ একটি শাখার ব্যবস্থাপক জানান, ভ্যান চালক, মুদি দোকানি, রাজমিস্ত্রি, কৃষি শ্রমিক, জেলে ও প্রান্তিক চাষি শ্রেণির আমানতকারীরা প্রতি মাসেই তুলে নিচ্ছে তাদের ব্যাংকে জমানো টাকা। শ্রমজীবী শ্রেণির এসব মানুষ ব্যাংকের টাকা তুলে ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র কিনছে। তাদের ভাষ্য, ব্যাংকের চেয়ে ডাকঘরের সঞ্চয়পত্রে মুনাফা বেশি। আমানতকারীরা সুদের পরিমাণ বেশি প্রত্যাশা করে। সূত্র মতে, জমানো টাকার সুদের পরিমাণ যেখানে বেশি হবে আমানতকারীরা সেদিকে ঝুঁকে পড়ে। ব্যাংক বছরে সর্বোচ্চ শতকরা সাড়ে ৫ টাকা সুদ দিয়ে থাকে। অপরদিকে সঞ্চয়পত্রে লাভ বেশি। খুলনা ডাক বিভাগের সিনিয়র এক পোস্ট মাস্টার জানান, শ্রমজীবী মানুষ ব্যাংকে এক লাখ টাকা জমা রেখে মাসে ৩৩০ টাকা সুদ পায়। সেক্ষেত্রে ডাকঘরে লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্রে মাসে লাভের পরিমাণ ৯১২ টাকা। সে কারণে ডাক ঘরের দিকেই ঝুঁকছে গ্রাহকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রাহক ব্যাংক থেকে আমানত প্রত্যাহার করে নেয়ায় ঋণ আমানতের অনুপাত (সিডিআর) বেড়ে গেছে। এক দিকে আমানত কমায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে, অপর দিকে সিডিআর বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এতে উভয় সঙ্কটে পড়েছেন তারা। গ্রাহক তার আমানত তুলে নিলে এর দায় কেন ব্যাংক নেবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকই কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে-এমনই প্রশ্ন করেছেন বেসরকারি ব্যাংকের এক এমডি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানিয়েছেন, আমানতকারীরা ব্যাংকের কাছে যে আমানত রাখে তা ব্যাংক অলস বসিয়ে রাখে না। বিনিয়োগ করে থাকে। এখন আমানতকারীদের অর্থ যে কোনো মুহূর্তে প্রত্যাহার করে নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমানতকারীর পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু ব্যাংক আমানতকারীদের যে অংশটুকু বিনিয়োগ করে তা রাতারাতি বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে না। ব্যাংকগুলোর জন্য এখানেই বিপত্তি। বিষয়টিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুধাবন করতে হবে।
অন্যদিকে আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে ফোন দিয়ে টাকা রাখতে বলছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। বলছেন, ব্যাংকে আমানত রাখলেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুনাফা দেয়া হবে। সঙ্গে বিশেষ কোন অফার তো থাকছেই। মূলত ঋণের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে আমানতের প্রয়োজনও বেড়েছে। প্রয়োজন মেটাতে চলতি মাস থেকে আমানতের সুদহার বাড়াতে শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। কোন কোন ব্যাংক জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে বাড়িয়েছে আমানতের সুদহার। কোন কোন ব্যাংক আমানতের সুদহার দুই থেকে চার শতাংশ বাড়িয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও আমানতের সুদের হার বাড়িয়েছে দুই থেকে পাঁচ শতাংশ। সঙ্গে দেয়া হচ্ছে বিশেষ অফার।
এদিকে শিল্পোদ্যোক্তারও উদ্বেগে রয়েছেন। তাদের মতে, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা শিল্পের জন্য অনুকূল নয়। যেখানে ব্যাংকগুলোই অর্থ সংকটে রয়েছে সেখানে শিল্পবিকাশে তারা ঋণ জোগাবে কীভাবে? তদুপরি, মুদ্রানীতিতে ঋণের লাগাম টেনে ধরায় বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। আবার সুদের হার বেড়ে যাওয়ায়ও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি সফিউল ইসলাম মহীউদ্দিন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের স¤প্রসারণে সুদের হার নমনীয় হারে রাখা আবশ্যক।
বর্তমানে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে প্রকল্পসহ বিভিন্ন নামে ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও জমি কেনার ঘটনায় ২০০৯-১০ অর্থবছর হঠাৎ করে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশে ওঠে। তার আগের অর্থবছর ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। বাড়তি চাহিদার কারণে ওই সময় ঋণ ও আমানতের সুদহার বাড়তে থাকে। এরপরও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় পরের অর্থবছর ২০১০-১১-এ ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ২৫ দশমিক ৮৪ শতাংশে ঠেকেছিল। ঋণ ও আমানতের সুদহার ব্যাপক হারে বাড়তে থাকায় ২০১২ সালে সব ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদহারের একটা সীমা নির্ধারণ করলেও কাজ হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ে ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ির পর ঋণ ও আমানতে সুদহার কমতে শুরু করে। গত কয়েক বছরে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ কম থাকায় ব্যাংকগুলোয় ঋণের চাহিদা কমে যায়। এ কারণে ব্যাংকে মাত্রাতিরিক্ত অলস অর্থের বিনিয়োগ বাড়াতে এবং আমানতের চাপ কমাতে ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের সুদের হার কমাতে থাকে। গত দুই বছরে ব্যাংকগুলো ব্যাপক হারে আমানতের সুদের হার কমিয়েছে। ঋণের সুদের হার সামান্য কমলেও ব্যাংকিং খাতে ঋণের চাহিদা বাড়েনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হঠাৎ বেড়েছে। ভোক্তা ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ব্যাংকাররা জানান, ঋণের চাহিদা না থাকায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকগুলোর লাখো কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত তারল্য ছিল, কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ঋণপ্রবাহ অনেক বেড়েছে। প্রতিমাসে ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বাড়ছে; কিন্তু আমানত বাড়ছে মাত্র ১০ থেকে ১১ শতাংশ। ফলে অতিরিক্ত তারল্য ফুরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য একেবারেই কমে গেছে, যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব ব্যাংককে জরিমানাও করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে ৯২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকায় নেমেছে। আগের বছরের একই সময়ে যা এক লাখ ২৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা ছিল। গত কয়েক বছরের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় উদ্বৃত্ত তারল্য কখনও এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার নিচে আসতে দেখা যায়নি।
চলতি বছরের শেষের দিকে নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনী বছরে ঋণের প্রবৃদ্ধি কম রাখার পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকগুলো ব্যাপকহারে ঋণ বিতরণের সুযোগ চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করলেও ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন পড়বে। অর্থ সংগ্রহের জন্য আমানতের সুদহার বাড়িয়ে আমানতকারীদের আকৃষ্ট করা হতে পারে। ইতোমধ্যে সরকারী ব্যাংকগুলোসহ অনেক বেসরকারী ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। যাতে গ্রাহক ব্যাংকে টাকা জমাতে আগ্রহী হন।
এদিকে ঋণগ্রহীতাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। এতে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) আইনী সীমা অতিক্রম করেছে। এডিআর সীমা কমানো হয়েছে। সীমার মধ্যে থাকার জন্য আমানত বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। তাই কয়েক বছর পর আবার কর্মকর্তাদের আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক। প্রাইম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মেয়াদি আমানতের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। বড় অঙ্কের আমানত পেলে তাদের ক্ষেত্রে আরও বিবেচনার সুযোগ রাখা হয়েছে। কর্মকর্তাদের আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছে।
সরকার মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক তাদের মেয়াদি আমানত প্রকল্পগুলোর সুদহার দশমিক ৫০ থেকে এক শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়েছে। তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার সাড়ে চার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশ, ছয় মাস মেয়াদি আমানতে চার দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশ, এক বছর মেয়াদি আমানতে পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ছয় শতাংশ, স্বল্পমেয়াদি আমানতে তিন থেকে বাড়িয়ে চার শতাংশ এবং সঞ্চয়ী আমানতের সুদহার সাড়ে তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চার শতাংশ নির্ধারণ করেছে রূপালী ব্যাংক।
অগ্রণী ব্যাংক দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ বাড়িয়ে তিন মাস মেয়াদি আমানতে পাঁচ শতাংশ, ছয় মাস মেয়াদি পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং এক বছর বা এর বেশি মেয়াদি আমানতে সাড়ে পাঁচ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করেছে।
বেসরকারী খাতের ঢাকা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এবি ব্যাংক সুদহার বাড়িয়েছে। তবে কোন কোন ব্যাংক এর চেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক সুদ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ আট শতাংশ নির্ধারণ করেছে। মেঘনা ব্যাংক সর্বোচ্চ সুদ দিচ্ছে সাড়ে নয় শতাংশ। ১ ফেব্রæয়ারি থেকে আমানতের বিপরীতে সুদহার দেড় থেকে দুই শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ৩ ও ৬ মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার সাড়ে সাত শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে নয় শতাংশ নির্ধারণ করেছে ব্যাংকটি। ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে কর্মকর্তাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমানত সংগ্রহ মাস, সপ্তাহ বা পাক্ষিক পালন করছে কোন কোন ব্যাংক। পূবালী ব্যাংক জোরেশোরে আমানত সংগ্রহ মাস পালন করছে। যা চলবে মার্চ মাস পর্যন্ত। এছাড়া নন-ব্যাংকিং কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতের সুদের হার বাড়িয়েছে দুই থেকে পাঁচ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বিগত বছরে ব্যাংকে ঋণের চেয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল কম। ফলে ব্যাংকে এখন আর অতিরিক্ত তারল্য নেই। আবার ঋণখেলাপি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ঋণ আদায় বাড়েনি। আবার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ায় টাকা সেখানে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন আমানতের সুদের হার বাড়িয়ে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে, এতে ঋণের সুদের হার বাড়বে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আর্থিক অনিয়ম, কেলেঙ্কারি, দুর্নীতির কারণে ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনা চলছে। তাই অপাত্রে বিনিয়োগে খেলাপী হচ্ছে ব্যাংকগুলো, যার ফলশ্রæতিতে মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে। তাই টাকা তুলে নিয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশের আর্থিক খাত হুমকির সম্মুখীন হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, ঋণপ্রবাহ কমলে বাণিজ্য প্রসার, বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিতে বাধা তৈরি হতে পারে। আর সুদের হার বাড়লে ব্যবসার খরচও বাড়বে। এসব কিছু অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য ভালো ফল আনবে না।

 



 

Show all comments
  • আশিক ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৩৫ এএম says : 0
    ব্যাংকের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়
    Total Reply(0) Reply
  • সৌরভ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৩৫ এএম says : 0
    এই রিপোর্টটি করারয় ইনকিলাবকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • জহির উদ্দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৫:৩৬ এএম says : 0
    মানুষ ভরসা পাচ্ছে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রাহক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ